দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তথা লেনদেনের জন্য বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম আপাতত উঠছে না। বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত এই পদ্ধতি বহাল রাখা হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
তবে মূল্য সূচক কোন পর্যায়ে গেলে বিএসইসি বাজারকে স্থিতিশীল মনে করবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।
তবে বিএসইসির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চলতি জুন মাসে ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি তুলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। যদি দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিলম্ব হয় এবং পুঁজিবাজারে তারল্য ও আস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসে তাহলে এটি জুনের পরেও বহাল থাকতে পারে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তারা ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ, গত জানুয়ারি থেকে পতন ধারায় চলতে থাকা পুঁজিবাজার মার্চের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাস আতঙ্কে টালমাটাল হয়ে উঠে। তীব্র দর পতনে ডিএসইএর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। গত ১৮ মার্চ সূচকটির অবস্থান নেমে আসে ৩ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে সূচকটি এর চেয়ে কম ৩ হাজার ৫৫৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নেমে আসে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৪ হাজার ৫৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট থেকে এই সূচকের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বাজারে বাধাহীন দরপতন (Free Fall) হতে থাকলে বিএসইসি গত ১৮ মার্চ দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নতুন ধরনের সার্কিটব্রেকার আরোপ করার নির্দেশ দেয়। এতে আগের ৫ কার্যদিবসের বিভিন্ন শেয়ারের ওয়েটেড এভারেজ ক্লোজিংপ্রাইস (ক্লোজিং মূল্যের ভারিত্ব গড়) কে ফ্লোর প্রাইস হিসেবে নির্ধারণ করতে বলা হয়। ওই নির্দেশনা অনুসারে কোনো শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ ফ্লোর প্রাইসের কম হলে সেটি কার্যকর হবে না, যার অর্থ শেয়ারের দাম কোনোভাবেই ফ্লোরপ্রাইসের নিচে নামতে পারবে না।
গত ১৯ মার্চ নতুন নিয়মে বাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ঘোষিত ছুটির কারণে মার্চের ২৭ তারিখ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ থাকে বাজারে। এরপর বাজারে লেনদেন শুরু হলেও লেনদেন তলানীতে নেমে আসে। বেশিরভাগ শেয়ারের মূল্য ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় বাজারে লেনদেন একরকম মুখ থুবড়ে পড়ে। এর মধ্যে গত ৪ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। এর প্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার বিষয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও বিএসইসি মনে করছে, বাজারের স্বার্থেই আরও কিছুদিন ফ্লোর প্রাইস থাকা দরকার।