মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে দেশের বেশকিছু স্থানে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সবধরনের অফিস আদালত বন্ধ করে সবাইকে বাসায় থাকতে বলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতে আগামী বাজেট প্রণয়নের কাজও পিছিয়ে পড়েছে। তাই আগামী ২০২০-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলে অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বাজেট আইন বা অর্থবিল অনুযায়ী দেশে অর্থবছর শুরু হয় জুলাই মাসে আর শেষ হয় জুন মাসে। সে অনুযায়ী প্রতি বছর জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপিত বাজেটের উপর দীর্ঘ আলোচনার পর সেটা পাস করা হয় জুন মাসের একেবারে শেষের দিকে। সে বাজেট কার্যকর হয় জুলাইয়ের প্রথম দিন হতে।
এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে সারাদেশে সরকারি ছুটি চলছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই ছুটি আরএ বাড়তে পারে। এজন্য বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি বাধার মুখে পড়েছে।
স্বাধারণ ছুটির মধ্যে সবধরনের প্রাক-বাজেট আলোচনাও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র ই-নথির মাধ্যমে অনলাইনে অতি জরুরি কিছু কাজ করছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা। তাই আগামী বাজেট ঘোষণা দুই মাস পিছিয়ে আগস্টে হতে পারে। তবে এটা চূড়ান্ত নয়। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বাজেট ঘোষণা পেছানোর জন্য ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট ঘোষণা না পেছানোর পক্ষে মত দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন এখনই পেছানোর ঘোষণা নয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলতি মাসের শেষের দিকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাধারণত বাজেট প্রণয়নে মার্চ মাস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনা করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা।
জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পৃথকভাবে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বসে। গত ১১ মার্চ এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) ড. আবু নুর রাশেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু হচ্ছে ১৯ মার্চ। মোট ২৮টি খাত-উপখাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের শুল্ক, ভ্যাট ও করসংক্রান্ত বিষয়ে মতবিনিময় করবে এনবিআর। এটি চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনাও করেছে এনবিআর। কিন্তু গত ৩০ মার্চ বাজেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত তা স্থগিত করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরুর কথা ছিল গত ৩০ মার্চ থেকে। প্রথম আলোচনাটি নির্ধারণ করা হয়েছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং জাতীয় সংসদে ৪টি স্থায়ী কমিটির (অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি) সভাপতিদের সঙ্গে। এরপর আগামী ২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করার সব প্রস্তুতি ছিল। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের দৈনিক কর্মসূচিতেও তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত করোনায় ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কর্মসূচিগুলো বাতিল করতে হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এখন সাধারণ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ অবস্থায় প্রাক-বাজেট আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অর্থবিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজও এ সময় হয়ে থাকে। সেটির কাজও স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এতদিনে আমাদের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘ ছুটির কারণে সব অফিস এখন বন্ধ। ফলে সে কাজটিও করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসব সংগত কারণেই আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
শেয়ারবার্তা / মিলন