একটুখানি অদৃশ্য ভাইরাস—লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে। সমগ্র মানবকুল শঙ্কিত, ভীত, সন্ত্রস্ত, দিশেহারা, ধর্ম, বর্ণ, অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা, মারণাস্ত্র রণসম্ভার, বড় দেশ কিংবা ছোট, এ মহাদেশ, ও মহাদেশ, ভাষা, সংস্কৃতি নির্বিশেষে সাড়ে সাতশ কোটি মানুষ আজ এক কাতারে কোণঠাসা। করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিরোধক টিকা ইনজেকশন আবিষ্কৃত হয়নি। যে মানবতা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবকে কাছাকাছি আনে, তা আজ ভূলুণ্ঠিত—সামাজিক দূরত্ব ছাড়া নাকি এর বিস্তার রোধ করা যাবে না। এ ভাইরাসে মরণ হলেও চিরাচরিত ধর্মীয় নিয়মে নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ‘বিশেষ নিয়মে’ সত্কার করতে হবে। যে বায়তুল্লাহ কাবা শরিফ ধর্মপ্রাণ মোমিনের গুনাহ মাফের এবং বিপদ থেকে বাঁচার প্রার্থনাস্থল, তাও আজ বন্ধ। যে অ্যালকোহল হারাম, তা দিয়ে হাত ধোয়াই এখন করোনা প্রতিরোধে ভালো। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, গণচীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানসহ ১৮৩টি দেশে করোনা বড়ভাবে আঘাত হেনেছে। রাশিয়া থেকে পুরো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বলতে গেলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ট্রপিক্যাল আবহাওয়ার দেশগুলোয় করোনার ফনা এখনো তুলনামূলকভাবে নিচে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া সাত লাখ আক্রান্তের মধ্যে ত্রিশ হাজার রোগী প্রাণ হারিয়েছে। মরণশীলতা নাকি শতকরা এক থেকে দেড় ভাগ।
অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি
ওইসিডি হিসাব করেছে যে সদস্য দেশগুলোয় এক মাসে সামষ্টিক আয় তথা জিডিপি কমেছে শতকরা ২ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে এক সপ্তাহে ৩৩ লাখ লোক বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ২ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা আইন পাস করেছে। ভারত ঘোষণা করেছে পৌনে ২ লাখ কোটি রুপির প্রণোদনা প্যাকেজ। দেশে দেশে ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক হিসাব আর অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে উত্তরণের পথ খোঁজা হচ্ছে।
আইএমএফ বলছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। ছয় হাজারের কিছু বেশি মানুষকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে কয়েক লাখ। ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছে। সরকারি অফিস, চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান, খাবার ও দৈনন্দিন কাঁচাবাজার ছাড়া সবকিছু বন্ধ—এগুলো ভাল উদ্যোগ। সাধারণ ছুটির প্রথম দিন ২৬ মার্চ একটি ‘অতি উত্সাহী’ সার্কুলার ও অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ওপর কিছু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর অসদাচরণ দুঃখজনক এবং এসি ল্যান্ডের অমানবিকতা লজ্জাজনক। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকারপ্রধান জনবন্ধু শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রফতানি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার নগদ প্রণোদনা (কর্মজীবী ও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য), ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড, বিনা মূল্যে চিকিত্সাসেবা ও ওষুধ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করার ঘোষণা দিয়ে সরকারের কৃত সংকল্পতা জানান দিয়েছে। বিত্তবানদেরও তিনি এ প্রয়াসে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শিল্প খাতে বিপুল ক্ষতি হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি ‘ঘরে ফেরা’ কল্যাণমুখী কর্মসূচির আওতায় গৃহহীন, ভূমিহীন, দরিদ্রজনদের নিখরচায় বাড়ি, ছয় মাসের খাবার ও নগদ সহায়তা নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনকে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্যও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকঋণে বেশ কিছু সুবিধার সার্কুলার জারি করেছে।
কর্ম পরিকল্পনা: কিছু ধারণা
ক্ষয়ক্ষতি বিশাল হবে সন্দেহ নেই। তবে বীরের জাতি—বুকের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে যে জাতি এবং লাঠি, কোদাল, লগি, বৈঠা হাতে যারা জাতির পিতার নির্দেশে বিশাল শক্তিধর আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত সশস্ত্র দখলদার বাহিনীকে ‘কেমন বুঝতাছেন’ অবস্থায় পরাস্ত করে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছে, তাদেরও ক্ষয় নেই। তাই তো অক্লান্ত পরিশ্রম, দুরন্ত সাহসে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, দরিদ্র-অশিক্ষা-স্বাস্থ্য চিকিত্সাহীনতামুক্ত ও মৌলবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন প্রচণ্ড গতি জাতীয় সামষ্টিক বার্ষিক আয় প্রবৃদ্ধি এবং হূদয় উষ্ণ করা সামাজিক ধারা অবশ্যই প্রেরণার উৎস। সুতরাং কভিড-১৯-এর কালো থাবার বিস্তার রোধ, আক্রান্তদের সুচিকিত্সা এবং সমৃদ্ধির পথে যাত্রার পুনরুত্থানে কতিপয় বিষয় প্রতিনিয়তই ভাবতে হবে।
১৯৯৮ সালে প্রলয়কারী দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পর শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে সফলতার সঙ্গে নয় মাসব্যাপী দেড় কোটি ছিন্নমূল মানুষকে বাঁচিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আরো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য এবার আরো বহুবিধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কয়েকটি দিক হচ্ছে:
ক. প্রতিরোধ, প্রচারণা ও চিকিৎসা
১. আইইসিডিআরে ফোন সংযোগ করা কঠিন, কোনো কোনো হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যায় না—এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া ঠিক নয়। ব্রিফিংয়ের সময় আইইসিডিআরের পর্দায় ফোন বা মোবাইল নম্বরগুলো দেখানো হোক।
হাসপাতালগুলোয় তদারকি জোরদার করা হোক। প্রফেসর ডা. আব্দুল্লাহর হূদয়গ্রাহী বক্তব্যগুলোকে সব চ্যানেলে আরো ঘন ঘন প্রচার করা হোক। সমাজে বিশ্বাসযোগ্যদেরও এ কাজে লাগানো যেতে পারে।
২. নিঃসন্দেহে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের বিস্তার বাড়াতে হবে এবং চিকিত্সার জন্য অনেক বেশি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৩. ডাক্তার ও স্বাস্থসেবা দানকারীদের জন্য বহুমাত্রিক মাস্ক, অন্যান্য কার্যকর সুরক্ষা পোশাক-সরঞ্জাম ও উচ্চমানের বীমা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে প্রয়োজনবোধে বাধ্য করা জরুরি।
৪. সরকার তথ্য গোপন করছে বলে যে কানাঘুষা, তা যে সত্য নয় তা সবাইকে বোঝাতে হবে।
খ. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কার্যক্রম শুরু
যদি আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করোনার বিস্তার থামিয়ে দেয়া যায়, তাহলে যত শিগগির সম্ভব শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এ ধরনের আপদ মোকাবেলার জন্য অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির অবকাঠামো প্রস্তুত করা, পাঠদানে সহায়ক প্রোগ্রাম বানানো এবং অনলাইনে পাঠদানে সক্ষমতার বিষয়ে শিক্ষকমণ্ডলীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা সমীচীন হবে।
গ. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পুনরুত্থান
বলা হয় যে অন্ধকারের অমানিশার পরই হয় চন্দ্রকিরণ অথবা তাপসমৃদ্ধ সূর্যের আলো পৃথিবীকে শক্তি জোগায়। প্রতিটি মহাবিপদ বা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে বিপুল শক্তিতে জেগে ওঠার সুযোগ-সুবিধা। সে প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে বলা যায়:
১. অর্থনৈতিক পুনরুত্থান পরিকল্পনার প্রথমেই একটি নিশ্ছিদ্র কর্মপন্থার মাধ্যমে পাঁচ সপ্তাহ পর চৈত্রের শেষ—বৈশাখের শুরুতে মাঠে থাকা বাম্পার বোরো ধান কেটে কিষান-কিষানীর ঘরে তোলা। বোরোয় এখন শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি চাল উৎপন্ন হয়। কিছু কিছু সরকারি সংগ্রহকারী খাদ্য কর্মকর্তা দুর্নীতি ও মিল মালিকদের চক্রান্তজাল এবার ভাঙতেই হবে। উচিতের চেয়ে বেশী মূল্য ধার্য করে সংগ্রহ অভিযান সফল করতে হবে।
২. ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাঁস-মুরগি পালনের যে শক্তিমান প্রকল্প শুরু করেছিলেন, তা আজ সহস্রাধারায় বিকশিত হয়েছে। মাগুরার শালিখায় ৫০ হাজার হাঁসের যে বিশাল খামার ব্যক্তিখাতে গড়ে উঠেছে, সে ধরনের উদ্যোগকে প্রণোদনা ও সহায়তা প্রদান করা হলে সুফল নিশ্চিত।
৩. করোনার বর্তমান আক্রমণে শাকসবজি, ফলমূল তথা দ্রুত পচনশীল পণ্যের দ্রুতগতি বিপণনে সর্বত্মক ও দুর্নীতিমুক্ত সহায়তা জরুরি। এ দুর্যোগে চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে মুনাফাখোরি ও কারচুপি শুরু হয়েছে। আরো কার্যকর তদারকি ও প্রয়োজনবোধে ভারি শাস্তি ছাড়া এ লোভের পথ থেকে গণদুশমনকে নিরস্ত করা যাবে বলে মনে হয় না।
৪. কল্যাণরাষ্ট্রে অত্যন্ত উপযোগী তিনটি কার্যক্রম
ঘরে ফেরা, আশ্রয়ন ও একটি বাড়ি একটি খামারকে পর্যালোচানা করে বহুগুণে শক্তিশালী করে, বিশেষ করে আদর্শবাদী রাজনৈতিক কর্মীদের নিবেদিতপ্রাণ প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন করা উচিত হবে।
৫. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে ক্ষুদ্র ও মধ্যম শিল্পে কর্মসংস্থান হয় শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি। বাংলাদেশে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা কৌশলকে আরো বেশি রাষ্ট্রীয় সাংগঠিনক, প্রাতিষ্ঠানিক, আর্থিক ও প্রণোদনিক পৃষ্ঠপোষকতা অবিলম্বে প্রয়োজন। এতে দেশের এক-তৃতীয়াংশ যুবক ও যুবমহিলা (পাঁচ কোটি লোকের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছর) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইনকিউবেটরে উদ্যোক্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ নেবেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সুযোগ, ফ্যাক্টরিংসহ বিনা উপদ্রবে ক্ষুদ্র শিল্পঋণ ও ভেনচার ক্যাপিটালের মাধ্যমে মূলধন আহরণ করতে পারবেন। শিক্ষা খাতে বৃত্তিমূলকতার সাম্প্র্রতিক ঘোষাণাগুলো বাস্তবায়ন হলে আগামী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে চাকরি হারানোর শঙ্কা কেটে যাবে—খুলে যাবে জনমিতিক নগদায়নের বাড়তি লাভ।
৬. ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতির পিতা যে সমবায়িক বিপ্লবের কথা বলেছিলেন, আগামী দিনের আর্থসামাজিক পুনরুত্থানে এটি খুবই লাগসই একটি মাধ্যম হতে পারে।
৭. সার্বিকভাবে শিল্পায়ন তথা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়রোজগার বৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য দূরীকরণে বর্তমান প্রচেষ্টাকে অনেকগুণ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে এবারের ধাক্কায় বস্ত্র আমাদনির ওপর নির্ভরতা কমাতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড় বড় বস্ত্রকল স্থাপনে সর্বব্যাপী প্রণোদনা সমর্থন দিলে বছরে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের বস্ত্র আমাদানি খরচ কমবে, হবে কর্মসংস্থান এবং ঘটবে রুলস অব অরিজিনে চার স্তরের প্রাপ্যতা। তাছাড়া তৈরি পোশাকের বস্ত্র উপাদানের জন্য ৪২ দিন অপেক্ষা করতে হবে না। ঘটবে উৎপাদনের বহুমাত্রিকতার শুভসূচনা।
৮. সব কর্মজীবী নিম্ন আয়ের মানুষকে সামাজিক সুরক্ষালয়ে আনা হোক।
৯. এবার কি আরএমজি ডিজাইন ও রফতানি গন্তব্যে বহুমাত্রিকতা আনতে পারবে না।
১০. অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতিতে আরএমজি ও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে চান। উপযুক্ত সুরক্ষা থাকলে বাধা নয়।
ঘ. সংস্কার
সংস্কার সহজ নয় এবং তেতো। মনে হয় করোনার ছোবল থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর বাংলাদেশে আমূল সংস্কার করা যাবে অর্থনীতি ক্ষেত্রে।
১. ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলে জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর চালু করার পথ প্রশস্ত হবে। বন্ধ হবে মে-জুনের তড়িঘড়ি মেরামত ও নদীভাঙন বাঁধ প্রকল্পের।
২. বেশি স্পর্শকাতর না হলে সোম-শুক্র কর্মসপ্তাহ চালু করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ নিশ্চিত করে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে। তবে এতে ঝুঁকি কমানোর জন্য আগেভাগেই আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ মুসলিম দেশইে সোম-শুক্র কর্মসপ্তাহ বিরাজমান। এ দেশেও জেনারেল এরশাদের আগে সোম-শুক্র কর্মসপ্তাহে কেউ আপত্তি করেননি।
৩. আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সাময়িকভাবে হলেও সম্প্রসারণের কৌশল নিতে হবে। কারণ বিনিয়োগ তথা অর্থ খরচ না বাড়ালে উৎপাদন বাড়বে কীভাবে? কর্মসংস্থানইবা হবে কোন উপায়ে। মূল্যস্ফীতি হতে পারে। তবে দেশজ প্রকৃত পণ্যের উৎপাদন যত দ্রুত বাড়ানো যাবে, ততই মূল্যস্ফীতির বিপদ কমে আসবে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে এবং বাংলাদেশ বস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আমদানি ব্যয় কমবে।
৪. আর্থিক খাতে মেয়াদি ঋণের বোঝা থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে মুক্তি দিতে হবে; এরা স্বল্পমেয়াদি ওয়ার্কিং মূলধন, বাণিজ্য ঋণ, হোম লোন ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগযোগ্য ঋণপ্রবাহের জন্য মূলধন বাজার, বীমা, পেনশন ফান্ড ও প্রভিডেন্ড ফান্ডের দিকে নজর দিতে হবে।
৫. বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ মূলধন বাজারের ব্যবস্থাপনাকে আমূল পরিবর্তনে ঢেলে সাজাতে হবে। বুক বাইন্ডিং, প্লেসমেন্ট, পুনর্মূল্যায়ন, সার্ভিল্যান্স, ইনডিপেনডেন্ট পরিচালক নিয়োগ ও সিইও-সিএফওদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া ইত্যাদি রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতি তা বন্ধ করা সম্ভব এবং উচিত।
৬. ব্যাংকিং খাতে ‘নয় ছয়’ না করে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, মালিকদের কার্টেল ও অন্যান্য রিজিডিটি দূর করে অবাধ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা গেলেই বাজারের ধর্মে লোনেবল ফান্ডের মিথস্ক্রিয়ার সুদের হার নির্ধারিত হবে। ঋণখেলাপিরা আর কতদিন বাহাদুরি করবে। বাংলাদেশ টাকাকে জোর করে অতিমূল্যায়নে না রেখে চাহিদা জোগান শক্তিতে বিনিময় হারে নিয়ে গেলে রফতানি জোয়ার সৃষ্টি সম্ভব হবে। থাকবে না ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের কোনো কারণ। কমে যাবে মানি লন্ডারিং। অবশ্যই আরও বাড়বে রেমিট্যান্স। শুরুতে ভয় হতে পারে। তবে আখেরে ফল ভালো হবে।
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী