করোনা আতঙ্কে বিশ্ব পুঁজিবাজারে চলছে রেকর্ড উত্থান-পতন। এ সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও রেকর্ড পতনের দেখা মিলেছে। বিদায়ী সপ্তাহে প্রথম চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন। তবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনায় মাত্র আধা ঘণ্টার লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক এক লাফে বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ডিএসইর নতুন সূচক চালু হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় উত্থান। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে করোনায় কাবু হলেও ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার এবং বড় পতন হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারের পতন বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন একটি ফরমুলা জারি করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেওয়া উদ্যোগ ইতোমধ্যে কাজ করতে শুরু করেছে। নতুন ফরমুলা অনুযায়ী, এখন থেকে শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নামতে পারবে না। এ কারণে সূচকও নির্ধারিত একটি সীমার নিচে নামার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি, গুজব আর করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত এই শেয়ার বাজারকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বড় ভূমিকা রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী যে ফরমুলা দিয়েছেন, তাতে এই বাজার আর আগের মতো পড়বে না। তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত তৃতীয় বিশ্বের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও তিনি মনে করেন। ডিএসইর সাবেক সভাপতি আরও বলেন, ‘পাঁচ দিনের গড় দামের নিচে কোনও শেয়ার লেনদেন হবে না। বিগত পাঁচ দিনের গড় দামের চেয়ে নিচে নামতে গেলেই সার্কিট ব্রেকার চালু হয়ে ওই শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে।’
তবে দর বৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের আগের নিয়মই অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয় বিএসইসির আদেশে।
এদিকে সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন আনতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) তিন দফা সময় পিছিয়ে লেনদেন শুরু হয় বেলা দুইটায়। লেনদেন চলে মাত্র আধা ঘণ্টা।
বেলা আড়াইটায় শেষ হওয়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গিয়ে দাঁড়ায় ৩৯৭৪ পয়েন্টে। আগের দিনের চেয়ে যা ৩৭১ পয়েন্ট বা ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
বৃহস্পতিবার মাত্র আধা ঘণ্টায় ডিএসই’তে ৪৯ কোটি টাকার শেয়ার হাত বদল হয়। লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে এদিন ১৪১টির দাম বাড়ে, কমে ৪৯টির। ১৫২টি শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে।
প্রসঙ্গত, নতুন বছরের শুরু থেকেই দেশের শেয়ার বাজারের প্রতি আস্থার অভাব ছিল মানুষের। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রায় সপ্তাহজুড়েই পতন হচ্ছিল বাজারে। গত রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স কমে যায় প্রায় ৬২৮ পয়েন্ট বা ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু বুধবারেই ডিএসইএক্স ১৬৮ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে দেশের দুই পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত লেনদেন হওয়ার কথা থাকলেও এদিন বেলা দুইটায় লেনদেন শুরু হয়।
এদিকে বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের আগের তিন সপ্তাহেও পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে আগের তিন সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে ৩৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ নিয়ে টানা চার সপ্তাহের পতনে বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন।
ডিএসই’র তথ্য বলছে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৪টির। ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা— যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ১০ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা।
শেয়ারবার্তা / মিলন