খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি ওসামা তাসির বলেছেন, সরকার এক অঙ্কের সুদ হারে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক।
আজ শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চিত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের রফতানি বাড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। এর মূল কারণ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে, কিন্তু লাভ হচ্ছে না। ব্যাবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পণ্যের চাহিদা কমায় ক্রমাগত লোকসান হচ্ছে।
তিনি জানান, বেশিরভাগ ব্যাংক এখনো ১১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দিচ্ছে। এতে করেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।
সরকার এক অঙ্কে সুদহার নামানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক অংকের সুদহার বাস্তবায়নে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।
ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শিল্পখাতে মেয়াদি ঋণ ২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। পাশাপাশি একই সময়ে এসএমই ঋণ দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৯০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
ওসামা তাসির বলেন, মুদ্রানীতিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয়পত্রের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হয়েছে। এজন্য খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে করের আওতা বৃদ্ধি করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ প্রবণতা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজার পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করা আবশ্যক এবং একইসঙ্গে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় মূল্য নির্ধারণ করা খুব জরুরি।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বন্ড মার্কেটের অনুপস্থিতি, ভালো প্রতিষ্ঠান এবং সুশাসনের অভাব পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনাকে সীমিত করে রেখেছে।
‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার স্থাপন এবং স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যাল হিসাবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানাচ্ছে ডিসিসিআই। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর উচিত গ্রিনফিল্ড প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত মূলধন সংগ্রহ করার সুযোগ দেওয়া’।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসএমই প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ব্যবহার করে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সুদহার বেশির মূল কারণ খেলাপি ঋণ যা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এক অংকে সুদহার বাস্তবায়ন ও খেলাপি ঋণ কমাতে সুশাসনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়াকার চৌধুরী, সহ-সভাপতি ইমরান আহমেদ ও পরিচালক শামস মাহমুদ প্রমুখ।
শেয়ারবার্তা / আনিস