পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছে সরকারি-বেসরকারি তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক। তিন ব্যাংকের প্রত্যেকটি (ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক) নিজস্ব উৎস থেকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করছে। এতে আস্থাহীন পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে যে সংশয় ছিল, তার অবসান ঘটছে। রোববার (৮ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার এক মাসের মাথায় ব্যাংক তিনটি এ তহবিল গঠন করলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিন ব্যাংকই নিজস্ব অর্থায়নে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এছাড়া আরও পাঁচটি ব্যাংক তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করছে। সেগুলো হচ্ছে- ন্যাশনাল ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংক।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংক ইতোপূর্বে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুবিধায় নেয়া ৫০ কোটি টাকা নবায়ন করেছে। ন্যাশনাল ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়নে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে তহবিলের আকার বাড়াবে। এছাড়া রূপালী ব্যাংক ৮০ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে ধারাবাহিক দরপতন ঠেকানো ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। তবে চাইলে এ তহবিল গঠনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ৫ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ নিতে পারবে। তবে মেয়াদ ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারির বেশি নয়। কোনো ব্যাংক এ সার্কুলারের আওতায় গঠিত তহবিল থেকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত নিজে বিনিয়োগ করতে পারবে। বাকি ৬০ শতাংশ ওই ব্যাংকের শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট সহযোগী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকের স্বতন্ত্র ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে ঋণ দিতে পারবে।
তহবিল থেকে বিনিয়োগ ব্যাংক কোম্পানির আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সীমা-সংক্রান্ত বিধান পালন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে বিনিয়োগের শর্ত দেয়া হয়েছে গঠিত তহবিলের অন্তত ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে যেসব ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে, যেগুলো বিগত তিন বছর ধরে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টানা তিন বছর ধরে অন্তত ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদান করছে এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার শর্ত দেয়া হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক দিন শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধসের প্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ফান্ড গঠনে দেয়া সুযোগের বিষয়ে আলোচনা করতে এ সভার আয়োজন করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিকেল ৩টায় রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।
এদিকে সোমবার (৯ মার্চ) শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। ভয়াবহ এ পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭৯ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চালুর পর সূচকটির এত বড় পতন আর হয়নি। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচকটি শুরুরও নিচে নেমে গেল। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে ডিএসইএক্স চার হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি।
শেয়ারবার্তা / আনিস