প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৫০ লাখ ১৯ হাজার ২৯৭টি শেয়ার ৮০ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকায় লেনদেন হয়, যা মোট লেনদেনের চার দশমিক ৮৯ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির দর ৯ দশমিক ছয় শতাংশ বেড়েছে।
সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর চার দশমিক চার শতাংশ বা ছয় টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি সর্বশেষ ১৬৪ টাকা ৮০ পয়সায় হাতবদল হয়। ওইদিন কোম্পানিটির ১১ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৮টি শেয়ার লেনদেন হয়, যার বাজারদর ১৯ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। শেয়ারটির সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ১৬৬ টাকা ২০ পয়সায়। ওইদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বনিম্ন ১৪৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৭৫ টাকায় হাতবদল হয়। আর গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২০৫ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠানামা করে।
এদিকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আলোচিত সময়ে ইপিএস হয়েছে ১৩ পয়সা (লোকসান) এবং শেয়ারপ্রতি এনএভি দাঁড়িয়েছে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে এক টাকা ৬৮ পয়সা (লোকসান)। ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য আগামী ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় কারখানা প্রাঙ্গণে (১৩১-১৪২, টঙ্গী, গাজীপুর) এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ নভেম্বর।
ব্যালেন্সিং অ্যান্ড মডারেশনের জন্য মূলধন জোগানের লক্ষ্যে সঞ্চিত আয় মূলধন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। আর এ বোনাস শেয়ার পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে দেওয়া হবে। এছাড়া কোম্পানির ক্যাপিটাল রিজার্ভ কিংবা রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ অথবা আন-রিয়েলাইজড গেইন অথবা পরিশোধিত মূলধন কমিয়ে অথবা এমন কোনো উৎস থেকে এ বোনাস দেওয়া হবে না, যার কারণে লভ্যাংশ-পরবর্তী রিটেইনড আর্নিংস নেগেটিভ অথবা ডেবিট ব্যালেন্স হয়।
এছাড়া চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৯) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। তথ্যমতে, প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা, আগের বছর একই সময় ছিল ৭২ পয়সা (লোকসান)। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ইপিএস ৮৯ পয়সা বেড়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য হয়েছে ১৭৫ টাকা ৪৭ পয়সা, যা ২০১৯ সালের ৩০ জুনে তারিখে ছিল ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। আর এ প্রান্তিকে শেয়ায়প্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ হয়েছে চার পয়সা। আগের বছর একই সময় ছিল ৪৬ পয়সা (লোকসান)। এতে দেখা যায়, সব সূচকে কোম্পানিটি আগের হিসাব বছরের তুলনায় সমাপ্ত হিসাব বছরে এগিয়েছে।
‘এ’ ক্যাটেগরির ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেড ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ওই সময় শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে দুই টাকা পাঁচ পয়সা আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯৩ টাকা ৬২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল যথাক্রমে দুই টাকা ৮৬ পয়সা লোকসান ও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ২১৫ টাকা ২০ পয়সা। আর ২০১৮ সালে লোকসান করেছে পাঁচ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা তার আগের বছর একই সময় ছিল সাত কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৫২৫ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কোম্পানিটির মোট তিন কোটি ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ১৮৫টি শেয়ার রয়েছে। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা বা পরিচালকের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, সরকারি ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
আর লেনদেনের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে ছিল সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির এক কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৬০২টি শেয়ার ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় লেনদেন হয়, যা মোট লেনদেনের দুই দশমিক ৬৪ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির দর ৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ কমেছে।
এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা তিন টাকা ৮০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি সর্বশেষ ৪২ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। দিনজুড়ে ৩৫ লাখ ৩৭ হাজার ৬০৮টি শেয়ার দুই হাজার ৬৫৪ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। দিনভর শেয়ারদর সর্বনিম্ন ৩৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়। গত এক বছরে শেয়ারদর ১৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৬৯ টাকা ৬০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।
কোম্পানির ১০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিমা খাতের এ কোম্পানিটি ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির মোট তিন কোটি ৭৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫০টি শেয়ার রয়েছে। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৩৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ ও বাকি ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজারদরের ভিত্তিতে শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ২৫ দশমিক ৪৮ ও হালনাগাদ অনিরীক্ষিত ইপিএসের ভিত্তিতে ১৮ দশমিক ৬৬।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটির ৭৮ লাখ ১২ হাজার ৪৪৮টি শেয়ার ৪২ কোটি ৩২ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় লেনদেন হয়, যা মোট লেনদেনের দুই দশমিক ৫৬ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটির ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস