বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। এতে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এক সপ্তাহেই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে।
গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহেও বাজারে বড় দরপতন হয়। এতে আগের সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে ১৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহের পতনে বিনিয়োগকারীরা ২২ হাজার কোটি টাকার ওপরে হারালেন।
বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২ শতাংশের ওপরে। আর লেনদেন কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৯৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৭টির। আর ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১৬ হাজার ২৭৯ কোটি। এ হিসাবে দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমল ২২ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ২৫২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
বাকি দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমেছে ২৮ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৪৪ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ১২ শতাংশ।
আর ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৩০ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ১০০ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।
সবকটি সূচকের এমন পতনের মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ চার’শ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৬৭৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের মধ্যে ‘এ’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘বি’ গ্রুপের অবদান ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান ১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের অবদান ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১২১ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিএফএস থ্রেড ডাইংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৩০ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ৫৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জিবিবি পাওয়ার।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ফার কেমিক্যাল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সিলভা ফার্মাসিউটিক্যাল।
শেয়ারবার্তা / আনিস