পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। একই সঙ্গে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালকের পদও ছেড়েছেন তিনি।
আজ রোববার (১ মার্চ ২০২০) তিনি প্রতিষ্ঠানটি থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রের কপি বাংলাদেশ ব্যাংক, হাইকোর্টসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের লুণ্ঠিত অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকার কারণেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকই ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানেই এ অর্থের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ ধরনের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টেনে তোলা সম্ভব নয়।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ খারাপ হলে সেটি সংস্কার করা যায়। অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ আদায়ের চেষ্টা করেও সফল হওয়া সম্ভব। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে, সে টাকা ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। এ টাকা আদায় করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উদ্যোগী হতে পারে। এছাড়া আমার শারীরিক পরিস্থিতিও খুব বেশি ভালো নেই। আমানতকারীরা প্রতিদিনই টাকা ফেরত পাওয়ার আসায় আমার কাছে আসছেন। এভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে টেনে তোলা যাবে না। সবদিক বিবেচনায় নিয়েই আমি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে পদত্যাগ করেছি।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে নিয়োগ দেয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানিকালে এ আদেশ দিয়েছিলেন। উচ্চ আদেশের নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইব্রাহিম খালেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটির ব্যালান্সশিট পর্যালোচনা করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি প্রতিষ্ঠানটির অর্থ লুণ্ঠন প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য বিষয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টকে জানান।
প্রসঙ্গত, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিংসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেশান্তর হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মোট সম্পদ ছিল ৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা ঋণ ও লিজ হিসেবে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকদের আমানত ছিল ৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এ আমানতের অন্তত অর্ধেক নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে লুণ্ঠন করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা রাখা আমানত ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা।
শেয়ারবার্তা / মিলন