এপ্রিল মাস থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুতের বাড়তি বিল দিতে হবে। বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৩৬ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বাড়ানো হয়েছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ও সঞ্চালন চার্জও।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আদেশে বলা হয়, আবাসিকের লাইফ লাইন গ্রাহকদের (০ থেকে ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম করা হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এরপর সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে ০ থেকে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৯ পয়সা, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের জন্য ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ৭২ পয়সা, তৃতীয় ধাপে ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের জন্য ৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা, চতুর্থ ধাপে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের ইউনিট মূল্য ৬ টাকা ০২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা, পঞ্চম ধাপে ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে।
খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গ্রাহকরা কে কত টাকা করে বিল দেবেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন জানায়, লাইফ লাইন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে ৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। গ্রাহকদের বিল ক্ষেত্রভেদে ২১৫-২১৯ টাকা থেকে বেড়ে ২২০-২২৪ টাকা এবং ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২১৭ টাকা ৫০ পয়সা হতে পারে।
কমিশন থেকে আরও জানানো হয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম বাড়বে ৪৪ টাকা। যাদের আগে বিল আসতো ৭৫৯ টাকা তাদের বিল এখন বেড়ে দাঁড়াবে ৮০৩ টাকা। একইভাবে মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের দাম বাড়ছে ১১৪ টাকা। যাদের বিল আগে আসতো ১ হাজার ৯৫২ টাকা তাদের এখন বিল আসবে ২ হাজার ৬৬ টাকা। সেচ গ্রাহকদের বাড়ছে ১৮৮ টাকা। আগে যেখান তাদের বিল আসতো ৩ হাজার ২৬০ টাকা, এখন দাম বাড়ার ফলে আসবে ৩ হাজার ৪৪৮ টাকা। একইভাবে ক্ষুদ্রশিল্প গ্রাহকদের বাড়ছে ৮১০ টাকা। আগে যেখানে তাদের বিল আসতো ১৬ হাজার ৫৫০ টাকা, এখন আসবে ১৭ হাজার ৩৬০ টাকা। মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এখন যাদের বিল আসে ৩ লাখ ২৬ হাজার, তাদের বিল বেড়ে দাঁড়াবে ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। বৃহৎ শিল্প গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে ৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এখন যারা বিল দেন ১ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, দাম বাড়ার পর বিল দেবেন ১ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে কমিশন থেকে সরবরাহ করা তথ্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মোট ১ কোটি ৩৮ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহকের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ( আরইবি)-এর অধীন ৭৫টি সমিতিতে ১ কোটি ২১ লাখ গ্রাহকের প্রত্যেকের বিল বাড়বে মাসে ৫ থেকে ৬ টাকা করে। আর বাকি ৫টি সমিতির ৬ লাখ গ্রাহক এবং ৫টি বিতরণ কোম্পানির ১১ লাখসহ মোট ১৭ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহকের প্রত্যেকের বিল বাড়বে ১৫ থেকে ১৮ টাকা করে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, গণশুনানির সময় উপস্থিত না থাকলেও আগের সদস্যদের রেখে যাওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হুট করে দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা লাইফ লাইন গ্রাহক ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের বিদ্যুতের দাম খুব একটা বাড়েনি।
তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। সেই ব্যয় কেন গ্রাহকের ঘাড়ে দেওয়া হবে–এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবেই আদেশে বলেছি, এখন থেকে আর কোনও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না এবং গ্যাস নেটওয়ার্ক আছে এমন এলাকাগুলোতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনও চুক্তিও করা যাবে না। ফলে তেলভিত্তিক আর কোনও কেন্দ্র আসছে না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবর মাসে পিডিবি ও বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গত ২৮ নভেম্বর থেকে চার দিনব্যাপী গণশুনানি করে কমিশন।
শেয়ারবার্তা / হামিদ