দেশে উৎপাদিত বেনসন ও গোল্ডলিফসহ ছয় ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে হেভি মেটাল (ভারী ধাতু) পাওয়া গেছে, যা শুধু ধূমপায়ী নয় পাশে থাকা মানুষের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএফএসএ কর্তৃপক্ষ দেশে উৎপাদিত বেনসন, গোল্ডলিফ, স্টার, নেভি, হলিউড ও ডারবি ব্র্যান্ডের সিগারেটের তামাক পরীক্ষা করেছে। এসব সিগারেটের তামাকে লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
বিএফএসএ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ছয়টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের তামাকে আশঙ্কাজনক পরিমাণে হেভি মেটাল পাওয়া গেছে। অথচ তামাকের মধ্যে হেভি মেটাল থাকার কোনো সুযোগ নেই। সিগারেটে তামাকে এসব হেভি মেটালের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপায়ীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।
ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্যের জন্য কী পরিমাণ ক্ষতিকর, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্ধারণ করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
সেই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত সিগারেটের তামাকে কীভাবে হেভি মেটাল প্রবেশ করছে, বিএফএসএ তা খুঁজে বের করার অনুরোধ করে। পাশাপাশি উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর হেভি মেটাল থাকার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে অনুরোধ করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), অ্যাটমিক এনার্জি সেন্টার ঢাকা এবং ওয়াফেন রিসার্চ ল্যাব থেকে প্রতিটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের তামাক পরীক্ষা করা হয়। তিনটি ল্যাবরেটরির পরীক্ষায়ই এসব ব্র্যান্ডের সিগারেটের তামাকে হেভি মেটাল ধরা পড়েছে।
ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট বলছে, ছয়টি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মধ্যে ০.৪৯-১০০.৯৫ গ্রাম/কেজি (সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ) লেড, ০.৪০৫-১.৩৭ গ্রাম/কেজি ক্যাডমিয়াম ও ০.৮২-১.৪৯ গ্রাম/কেজি ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগারেটের ধোঁয়া শরীরের ভেতরে সরাসরি প্রবেশ করে, যা বিভিন্ন ক্ষতি করে। এর মধ্যে ভারী ধাতুর উপস্থিতি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ, হার্ট ও লিভারের নানা রোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। তবে সিগারেটের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো, সিগারেট যে খাচ্ছে ধোঁয়াটা শুধু তারই ক্ষতি করছে এমন নয়, বাতাসের মাধ্যমে ধূমপায়ীর পাশের ব্যক্তিরও ক্ষতি করছে।
এর আগে হাকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার কারণে দাঁতের মাড়ি ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হয়।
দুই ধাপের পরীক্ষায় এসব পণ্যে ক্ষতিকর মাত্রার সীসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএফএসএ। মামলায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ জর্দা যেন দ্রুত বাজার থেকে তুলে নেয়া হয় এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পণ্যগুলো বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন।
শেয়ারবার্তা / মিলন