আচমকা দরে বিপর্যয় নেমে এসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাট খাতের কোম্পানি নর্দার্ণ জুটের শেয়ারের। গত বছর বাজারে গুঞ্জন ছিল, প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের বড় আকারে লভ্যাংশ দেবে। যে কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদর আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষণা আসে ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ারের। এরপর থেকেই শেয়ারটির দরে ধারাবাহিক পতন নেমে আসে। সর্বশেষ কোম্পানিটির সব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ এবং কারখানা বন্ধের ঘোষণায় এর শেয়ার দরে আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
উল্লেখ্য, গত রোববার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ কোম্পানির বিভিন্ন ব্যাংকের সব অ্যাকাউন্ট স্থগিতের নির্দেশ দেন। ফলে কোম্পানিটি তাদের কোন এ্যাকাউন্ট থেকে রফতানি করতে পারবে না বিধায় সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই চলছে কোম্পানিটির শেয়ার দরে বড় বিপর্যয়।
ডিএসই জানিয়েছে, কোম্পানিটি ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কারণে কোম্পানিটির ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেই কারণটি সহসা নিরসন বলে মনে হয় না।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমতে শুরু করে। হঠাৎ এক হাজার টাকা থেকে দর ২৫৩ টাকায় চলে আসে। এ পর্যায়ে গুঞ্জন শুরু হয় পরের বছর কোম্পানিটি বড় আকারের বোনাস লভ্যাংশ দেবে। যে কারণে কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। মার্কেটে গুজব শোনা যায়, শেয়ারদর এক হাজার ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সত্যি সত্যিই এক সময় শেয়ারদর এক হাজার ৪০০ টাকা অতিক্রম করে।
কোম্পানিটি ২০১৯ সালের জন্য ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফলে দর আবারও কমতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা কম। যে কারণে এর চাহিদাও বেশি। বোনাস লভ্যাংশ পেলে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারসংখ্যা বৃদ্ধি পেত। এতে তাদের লাভের সম্ভাবনা তৈরি হতো। সে কারণে দর বাড়তে থাকে। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় এ শেয়ারের চাহিদায় ভাটা পড়ে; ফলে দর কমে যায়।
পাট খাতের এ কোম্পানিটি ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মোট শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৭৮ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া বাকি ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। সর্বশেষ আর্থিক বছরে কোম্পানিটি ৯৯ লাখ টাকা মুনাফা করে।
শেয়ারবার্তা / মিলন