গ্রামীণফোনের কাছ থেকে নিরীক্ষা দাবির ১০০০ কোটি টাকা বুঝে পাওয়ার পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেছেন, গ্রামীণফোনকে কখনো অপর পক্ষ বা শত্রু মনে করিনা। তাদের অপারেটর মনে করতাম, রেগুলেটর হিসেবে তাদের যা পাওনা তা সব সময় দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিছু কিছু কাজ বন্ধ রয়েছে আইনগত কারণে। নিজেদের কোনো ইচ্ছা বা অভিপ্রায় ছিল না যে গ্রামীণফোনের কোনো রকম ক্ষতি হোক।
অন্যদিকে গ্রামীণফোনের হেড অফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেছেন, আদালতের নির্দেশে তারা টাকা দিলেও আপত্তির জায়গাটা এখনও আগের মতই আছে। আলোচনার ভিত্তিতে আইনিভাবে এর সুরাহা হবে বলে তারা আশা করছেন।
বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০০০ কোটি টাকা রোববার পরিশোধ করে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন।
হোসেন সাদাতের নেতৃত্বে গ্রামীণফোনের একটি প্রতিনিধি বিটিআরসি কার্যালয়ে গিয়ে জহুরুল হকের হাতে এক হাজার কোটি টাকার পে-অর্ডার তুলে দেয়।
পরে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “অনেক দিন ধরে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। আজ সংবিধান রক্ষা হল, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ রক্ষা হল। এ সরকার তার প্রাপ্য অর্থের কিছু হলেও পেল, যা জনগণের টাকা। টাকা দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ দিই, দেরি হলেও ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছে, টাকাটা দেওয়াই যখন লাগবে, দিয়ে দিয়েছে তারা।”
বিটিআরসি প্রধান বলেন, “হয়ত কোনো ব্যাপারে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে সমস্যা হয়েছিল, তারা মনে করেছিল কোর্টে গিয়ে হয়ত কিছু কম পাবে। অনেক টাকা… বিলম্ব করতে পারলে ব্যবসায়িক লাভ হবে। গ্রামীণফোন শেষে হলেও মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে প্রোপ্রার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে এসেছে, এটি আমাদের জন্য খুব সুখের খবর।”
যে কোনো বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনায় আহ্বান জানিয়ে জহুরুল হক বলেন, “সমস্যা হলে রেগুলেটরকে জানাবেন, রেগুলেটরের সাথে আলোচনা না করলে লাভ হয় না, সময় কিছু নষ্ট হয়। সব করি জাতি ও দেশের জন্য, আমাদের কোনো ব্যক্তিগত পাওনা নাই।”
বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।
এই টাকা আদায়ে প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২২ জুলাই বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি)দেওয়া বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি।
তাতেও কাজ না হওয়ায় গতবছর ৫ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রয়োজনে গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগের কথাও বলেন।
এখন টাকা দেওয়ার পর এনওসির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “বিটিআরসিকে আদালত যে নির্দেশ দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের বাইরে আমরা যাব না।”
বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় গ্রামীণফোন গতবছর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।
গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়। সেজন্য তাদের দেওয়া হয় তিন মাস সময়, যা সোমবার শেষ হচ্ছে।
তার আগেই গত ২৬ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে গ্রামীণফোন। সে বিষয়ে শুনানি করে আপিল বিভাগ ১৯ ফেব্রুয়ারি বলে, ২০০০ কোটি টাকা গ্রামীণফোনকে দিতেই হবে। তার মধ্যে ১০০০ কোটি টাকা সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে সোমবার পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।
এর ধারাবাহিকতায় রোববার ১০০০ কোটি টাকা বিটিআরসিকে পরিশোধ করার পর গ্রামীণফোনের হেড অফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, “আমরা দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০০০ কোটি টাকা জমা দিলাম।
“আমার বলে আসছি অডিটের বিষয়ে আমাদের একটু আপত্তি আছে, সেই পজিশনটা স্টিল অব্যাহত রাখছি। আমরা মনে করি এই বিরোধটা রয়ে গিয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে লিগ্যাল প্রসেসের মাধ্যমে সমাধান হবে। আমরা একটা কাঠামোগত অবস্থানে আসব বলে বিশ্বাস করি।”
বিরোধ মীমাংসার জন্য গ্রামীণফোন আলোচনা অব্যাহত রাখতে চায় জানিয়ে সাদাত বলেন, “আমরা মনে করি আলোচনা অব্যাহত রাখতে পারলে সব পক্ষ মিলে একটা সুন্দর সমাধানে আসতে পারব। চলমান কিছু সমস্যায় ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কাস্টমারদের কাঙ্ক্ষিত মান দিতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”
শেয়ারবার্তা / হামিদ