পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইন্সুরেন্স লিমিটেড ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ হিসাববছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে। নেতিবাচক ঘোষণার কারণে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ হারিয়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা ২২ শতাংশ। কোম্পানিটি আজ ডিএসইর দর হারানোর তালিকায় প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির দরপতনের ধাক্কায় গোটা বীমা খাতের শেয়ার দরে আজ অস্বাভাবিক পতন দেখা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ লেনদেন শুরুর কিছু আগে ডিএসইতে প্রাইম ইন্সুরেন্সের ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণাটি আসে। ঘোষণাটি দেখে বীমা খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। লেনদেনের শুরু থেকে খাতটির বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফলে এই খাতে আজ লেনদেনে হঠাৎ খরা নেমে আসে এবং কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরেও অস্বাভাবিক পতন দেখা যায়।
এদিন বীমা খাতে ৪৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪১টি কোম্পানিরই শেয়ারদর কমেছে। বেড়েছে মাত্র ৬টি কোম্পানির।
অন্যদিকে, বীমা খাতে কোম্পানিগুলোর লেনদেনেও আজ খরা দেখা গেছে। আজ ৪৭টি কোম্পানির লেনদেন মোট হয়েছে ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার। এটি গত বৃহস্পতিবারের লেনদেনের তুলনায় প্রায় চার ভাগের একভাগ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এ বছর বীমা কোম্পানিগুলোর ভালো লভ্যাংশ ও ভালো মুনাফা আশা করছে। কিন্তু প্রাইম ইন্সরেন্সের ‘নো ডিভিডেন্ড’ দেখে তারা হতবাক হয়েছে। এমনিতেই গত সপ্তাহে চাঙ্গা বাজারে বীমা খাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে ছিল সপ্তাহজুড়ে ছিল নেতিবাচক প্রবণতা। তারপর আজ প্রাইম ইন্সুরেন্সের লভ্যাংশে নেতিবাচক ঘোষণায় এখাতের বিনিয়োগকারীরা হতাশায় পড়েছে। ফলে এখাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে আজ বিক্রীর চাপ থাকলেও কেনার চাপ ছিল না। এখাতের বিনিয়োগকারীরা ‘ওয়াচ এন্ড সী’ মুডে রয়েছেন বলে তারা মনে করছেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বীমা থাতে ইতোমধ্যে আরও ৩টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিগুলো হলো-নিটল, রিলায়েন্স ও গ্রীনডেল্টা ইন্সুরেন্স। কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিটল ইন্সুরেন্স আগের বছরের মতো ১৫ নগদ শতাংশ, গ্রীনডেল্টা ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক এবং রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ আগের বছরের সমপরিমাণ হলেও সবগুলোরই মুনাফা বেড়েছে।
সমাপ্ত হিসাববছরে নিটোল ইন্সুরেন্সে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ২২ পয়সা, আগের বছরে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৯৬ পয়সা; গ্রীনডেল্টার ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা, আগের বছরে ছিল ৩ টাকা ৯ পয়সা এবং রিলায়েন্স ইন্সুরেন্সের ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৫৭ পয়সা, আগের বছরে ছিল ৫ টাকা ২১ পয়সা।
প্রাইম ইন্সরেন্সের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতবছর শেষের দিকে কোম্পানিটিকে হঠাৎ করে একটি কারখানার বীমার বড় দাবি পরিশোধ করতে হয়েছে। যে কারণে কোম্পানিটির আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগের বছরগুলোতে কোম্পানিটি লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলেও সমাপ্ত হিসববছরে কোম্পানিটি লভ্যাংশের সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি।
বীমা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার গত বছর থেকে বীমা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। এখাতে ইতোমধ্যে অনেক অনিয়ম স্বেচ্চাচারিতা দূরীভূত হয়েছে। সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে বীমা কোম্পানিগুলোর পরিচালনায় স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা ফিরতে শুরু করেছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক কর্মকান্ডেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যত বীমা কোম্পানিগুলোর আযে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
শেয়ারবার্তা / আনিস