পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হাক্কানী পাল্প সর্বশেষ বছর দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে কোন রকমে ‘বি’ ক্যাটেগরি ধরে রেখেছে কোম্পানিটি। দীর্ঘদিন থেকে লোকসানে রয়েছে কাগজ ও প্রকাশনা খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি। তা সত্ত্বেও সম্প্রতি অস্বাভাকিহারে বাড়ছে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। হঠাৎ করে কেন এই দর বৃদ্ধি, তা বলতে পারছে না খোদ কর্তৃপক্ষও।
হাক্কানী পাল্পের সাম্প্রতিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গত ১৮ কার্যদিবস আগে এর শেয়ারদর ছিল ৪৩ টাকা। এর পর থেকেই দর ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে এর প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৫ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৩২ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ৭৪.৮০ শতাংশ।
লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজারসংশ্লিষ্টরাসহ কোম্পানি কর্তৃপক্ষও। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অল্প শেয়ার থাকায় এই শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। ফলে অকারণেই বাড়ছে দর। অন্যদিকে শেয়ারদর বাড়ার কারণ বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষও। তাদের মতে, এমন কোনো খবর নেই যাতে শেয়ারদর এভাবে পারে।
সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এখনও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’১৯) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৩৯ পয়সা। অন্যদিকে গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ’১৯) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৪৮ পয়সা। আগের বছর একই সময় ছিল ৬৪ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪৩ পয়সা।
হাক্কানী পাল্পের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মুসা এ বিষয়ে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কেন বাড়ছে, সেটা বলতে পারছি না। তবে আমাদের কাছে দর বৃদ্ধির কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই।
তিনি বলেন, এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে। অন্যদিকে আমাদের টিস্যু প্রজেক্টও বেশ আগে চালু হয়েছে। লোকসানও কিছুটা কমছে। এসব হয়তো কারণ হতে পারে, তবে কেন শেয়ারদর বাড়ছে এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ আমার জানা নেই।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিদেনে দেখা যায়, ব্যবসায় মন্দা থাকায় কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে লোকসান করে আসছে। ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে লাভের বদলে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৮১ লাখ টাকায়, যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান হয় ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে।
পরবর্তী ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৮২ লাখ টাকা লোকসান করলেও বিনিয়োগকারীদের তিন শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রদান করে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয় দুই কোটি ১১ লাখ টাকা। এবারও তারা দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে বি ক্যাটেগরি ধরে রেখেছে। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৩ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ৩৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস