ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য ঋণসহায়তা ও ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। এফবিসিসিআই বলেছে, চীনের করোনাভাইরাসের কারণে এক মাসের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ আমদানি সরবরাহ বিঘ্ন হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি তুলে ধরতে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করেছে। মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এ ছাড়া ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া একটি জাতীয় সরবরাহকৌশল প্রণয়নের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এফবিসিসিআই আপাতত কোনো আর্থিক সহায়তা চায় না। ব্যবসায়ীরা চান, চীনের সঙ্গে যে আমদানি-রপ্তানি হয়, তা যেন স্বাভাবিকভাবে চলে।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘চীনের বিভিন্ন প্রদেশের ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন যে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনের রপ্তানিবাণিজ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। আমরা চাই, আমাদের বন্দরে যেন কোনো চীনা পণ্য আটকে দেওয়া কিংবা খালাসে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি না হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চীন থেকে বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে আরএমজি এবং ইলেকট্রনিক্সের সর্বাধিক কাঁচামাল আমদানি করি। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরে গত এক মাসের মধ্যে আমাদের বাণিজ্য বিশাল ধাক্কা খেয়েছে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্য ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ ৮৩১ মিলিয়ন ডলার।
‘বাংলাদেশ ওভেন খাতের ৬০ শতাংশ এবং আরএমজির নিট খাতের ১৫-২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করে। গত এক মাসে আমাদের অর্থনীতির প্রায় ৮০ শতাংশ ভ্যালু চেইন বন্ধ হয়ে গেছে এবং ভাইরাস সংক্রমণের পরে শিপমেন্ট খুব সীমিত হয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।
এফবিসিসিআই প্রধান আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীন থেকে ৬ দশমিক ৭২ লাখ টন পণ্য এসেছে। ২০১৫ সালের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৫১ লাখ টন।
ফাহিম বলেন, তারা এ বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করবেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করছেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা স্বাভাবিক রাখার জন্য তাদের পাশাপাশি সরকার যেমন ব্যাংকগুলোরও কিছুটা সহায়তা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যথাযথ কাগজপত্র সরবরাহ করলে ওই ব্যবসায়ীদের এলসির বিপরীতে নেওয়া ঋণ যেন খেলাপ না করা হয়। কিংবা বাড়তি মাশুল, সুদের ওপর জরিমানা করা না হয়, সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। কেননা, এই বিলম্বের পেছনে ওই ব্যবসায়ীর দোষ নয়, দুর্যোগ দায়ী।
চীন থেকে আমদানির জন্য যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, কিন্তু শিপমেন্টে (জাহাজীকরণ) সময় লাগছে, এমন ব্যবসায়ীদের অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানির সুযোগ থাকলে ওই সব ব্যবসায়ীদের এলসি সীমার বাইরে স্বল্পমেয়াদি ঋণ–সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।
শেয়ারবার্তা / হামিদ