দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব খাতে বেশি অবদান রাখে। আর বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরীক্ষা করা হয়। উদ্ঘাটন হয় বড় অঙ্কের ফাঁকি। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ব্যাংক খাতে শত শত কোটি টাকা লেনদেন করে। রাজস্ব ফাঁকি দিতে তারা আয়কর রিটার্ন বা মাসিক ভ্যাট রিটার্নে লেনদেনের সঠিক তথ্য দেয় না।
ব্যাংক লেনদেনের সঠিক তথ্য না থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ফাঁকি উদ্ঘাটন করতে পারে না। এ জন্য ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ও স্থিতির তথ্য চেয়েছে এনবিআর। বিশেষ করে বছরে শতকোটি টাকার বেশি লেনদেনকারী বা স্থিতি থাকা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কত-তার তালিকা এনবিআরের কাছে নেই। তবে সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য, বিশেষ করে লেনদেন বা স্থিতির তথ্য ব্যাংকের কাছে রয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠানকে মাসিক দাখিলপত্র (ভ্যাট রিটার্ন) জমা দিতে হয়। আর বছর শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো আয়-ব্যয়ের হিসাব করে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। ভ্যাট বা আয়কর রিটার্নে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখায় না। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি দিয়ে আসছে এবং আয়কর বা ভ্যাট বিভাগের কাছে প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসাবের চিত্র তুলে ধরে না। ফলে ফাঁকি উদ্ঘাটন সম্ভব হয় না। বড় প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি উদ্ঘাটনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সব ব্যাংকের কাছে ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছে। সব ব্যাংকের তথ্য দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ৮২ ধারা অনুযায়ী নিরীক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের নোটিস দেওয়া হয়েছে। নতুন মূসক আইন অনুযায়ী প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করতে ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমানের পক্ষে উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘দেশের বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধযোগ্য মূল্য সংযোজন কর যথাযথভাবে আহরণ নিশ্চিত করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত নিরীক্ষা সম্পাদন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে একটি কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার আওতায় এসব প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য এ দপ্তর কর্তৃক একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচি সফল করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও বলা হয়, ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনার ব্যাংকের (ব্যাংকের নাম) যেসব গ্রাহকের বার্ষিক লেনদেন বা স্থিতি ১০০ কোটি টাকা বা তার অধিক, সেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা ছক অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রেরণ করতে অনুরোধ করা হয়েছে’। প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে চিঠিতে বলা হয়, কেবল ব্যক্তি খাতের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের (উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা ও লিজিং কোম্পানি ব্যতীত) তথ্য দিতে হবে। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর (পাঁচ বছরের বেশি) পর্যন্ত সময়কালে যে কোনো বছরে গড় লেনদেন বা স্থিতি ১০০ কোটি টাকা বা তার অধিক হলেই কেবল প্রতিষ্ঠানটি তালিকায় অন্তর্ভুক্তযোগ্য হবে।
১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী তথ্যগুলো হার্ডকপির পাশাপাশি এমএস এক্সেলের একটি সফট কপি সিডি বা পেনড্রাইভে পাঠাতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। এরই মধ্যে তথ্য আসতে শুরু করেছে। আরও কদিন সময় বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানের নাম, পুরো ঠিকানা, ই-মেইল, ফোন নম্বর, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর (বিআইএন নম্বর), ই-টিআইএন নম্বর, আরজেএসসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, আইআরসি বা ইআরসি নম্বর, প্রতিষ্ঠানের মালিক বা স্বত্বাধিকারীর নাম, প্রাইভেট না পাবলিক লিমিটেড, ব্যবসা বা সেবার ধরন (বিস্তারিত) দিতে বলা হয়েছে। তবে নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিতে বাধ্য।
নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিরীক্ষা করতে প্রথমবার এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান লেনদেন বা স্থিতির সঠিক তথ্য দেয় না। লেনদেন বা স্থিতির তথ্য পাওয়া গেলে আমরা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে আড়াআড়ি যাচাই করে নিরীক্ষা করতে পারব। বড় প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সঠিক তথ্য এনবিআরের কাছে চলে আসবে। এর মাধ্যমে ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি উদ্ঘাটন সহজ হবে।’
শেয়ারবার্তা / হামিদ