দেশের ধনিক শ্রেণি সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছে। এভাবে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে পাচার করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর টাকা ফেরত আনার পর মনে হয়েছিল, এবার পাচার করা সব টাকা ফেরত আনা হবে। কিন্তু হায়! সে আশায় গুড়ে বালি। পাচার করা টাকা ফেরতের উদ্যোগ থেমে গেছে কোনো এক অদৃশ্য কারণে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের বক্তারা এমনটাই অভিযোগ করেছেন।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট-উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংকট উত্তরণে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন বক্তারা।
আলোচনায় অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংক রক্ষা করতে রাষ্ট্রাত্ত খাতের ব্যাংকগুলোকে দিয়ে শেয়ার কেনানো হয়েছে। এভাবে সব ক্ষেত্রে কার্পেটের নিচে ময়লা লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। দেশে খেলাপি ঋণ কত, তা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্পষ্ট করে দেখিয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।’
এম এম আকাশ বলেন, ব্যাংক খাত তদারকির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে এখন খারাপ কোনো ঋণকে খেলাপি করতে পারেন না। তাঁদের ফোন করতে হয়। ওপরের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র আসছে না।
রেটিং প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘রেটিং করায় আমরা ব্যাংকগুলোর ভেতরের খবর জানি। ব্যাংকগুলোয় করপোরেট গভর্নেন্স বলতে কিছু নেই। চেয়ারম্যানরাই ব্যাংক পরিচালনা করে। এর ফলে ৫ শতাংশ মূলধন দিয়ে তারা পুরো ব্যাংক পরিচালনা করছে। আমি মনে করি, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশ।’ আলাদা কোম্পানি গঠন করে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ সফল হবে না বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশ যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, এর সত্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক অবনমনের দিকে, এ অবস্থায় কীভাবে এক প্রবৃদ্ধি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা দিন দিন এত ক্ষীয়মাণ হচ্ছে যে তা চিন্তাও করা যায় না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আমাদের অর্থমন্ত্রী এক নম্বর হয়েছেন। এর পরদিন দেখলেন পরিস্থিতি খারাপ। সারা বিশ্বে মন্দার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমদের অর্থনীতির সব সূচক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতি ধসে যাওয়ার উপক্রম। যাঁরা এমন পরিস্থিতিতেও অর্থনীতিকে ভালো বলছেন, তাঁরা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তাঁদের বিচার দাবি করছি। কিছু মানুষের লুটপাটের চাপ সব আমানতকারী কেন নেবে?’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করে, তাহলে কি তাদের পদ টিকে থাকবে? ব্যাংক লুটপাট, ব্যাংক দখল, পরিবেশ ধ্বংস এখন উন্নয়নের অংশ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চরম বৈষম্য চলছে। এটাকে কি উন্নয়ন বলা যায়? গড় আয় বেশি হলেই তো উন্নয়ন হয় না।’ এ সময় বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থা ধনী ও ডাকাতবান্ধব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শেয়ারবার্তা / আনিস