নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান লিজিং খাতে আমানত কমছে। ফলে অধিকাংশ কোম্পানির সম্পদের তুলনায় দায় বাড়ছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পদ-দায়ের প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আস্থার সঙ্কটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে খরা চলছে। নতুন আমানতের পরিমাণ বাড়ছে না। উপরন্ত পুরনো গ্রাহকরাও আমানত উত্তোলন করে নিচ্ছেন। অর্থ সঙ্কটের কারণে যথাসময়ে টাকা ফেরত না দিতে পারায় গ্রাহকরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পদ দায় অনুপাত ৮৬.৭ এ দাঁড়িয়েছে। যদিও এটি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ০.৪ শতাংশ কম। একদিকে আমানত হ্রাস এবং অন্য দিকে দায় বৃদ্ধির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণের প্রভিশন এডজাস্টমেন্টের কারণে ওই প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভিশনও ঘাটতি রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠারগুলোতে এক ধরণের অস্থিরতা চলছে। বিষয়টি এর আগে প্রকাশ্য ছিলো না। কিন্তু পিপলস্ লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। তাই গ্রাহকদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে এ খাতে এক ধরণের নিরব রক্তক্ষরণ চলছে। আর্থিক খাতের বাস্তব অবস্থা চেপে রাখা যাবে না। কখনো না কখনো তা প্রকাশ পাবেই। এতদিন জানলেও কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় এটি এখন স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানে কি কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এত খারাপ পর্যায়ে এসেছে। যারাই ঋণ নিচ্ছে তারা কেউ টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এমনকি কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরাও স্বনামে বা বেনামে ঋণ দিয়ে লুটপাট করেছে। তাই এ খাতের বিধানগুলো আরও কঠোর করতে হবে।
সর্বশেষ প্রান্তিকে একটি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির কারণে পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। এর ফলে গ্রাহকদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, রেড জোনে অবস্থান করছে ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ প্রান্তিকে মাত্র চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সবুজ ঘরে আছে। হলুদ ঘরে রয়েছে ১৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে লাল ঘরে বা রেড জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টির অবস্থান ব্যাখ্যা করা হলেও পিপলস্ লিজিংয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আহমেদ আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল