পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ায় বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়ায় সূচকের সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে লেনদেনও। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আলোচ্য সপ্তাহে বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানিগুলো অনেকটা চাপেই ছিল। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে এ খাতের শেয়ার লেনদেন কম হয়েছে। গতানুগতিক ধারায় সাধারণত পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের দরই বেশি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এবার সে ধারা দেখা যায়নি।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) গত সপ্তাহের লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। জানা গেছে, ডিএসইতে আলোচিত সময়ে মোট ৩৬০টি কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২৪৬টির, কমে ৯৪টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি দুটির। অন্যদিকে এই সময়ে ডিএসইর সবগুলো সূচকই আগের সপ্তাহের চেয়ে বেশ ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক সপ্তাহের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে ১১১ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে ছয় হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বেশি।
বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ তহবিল গঠনের নীতিমালা প্রকাশ করে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে পারবে। এই তহবিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।
জানা গেছে, এতে বর্তমান বাজার অনুযায়ী নতুনভাবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই অর্থের কতটুকু বিনিয়োগ হবে, তা সময় বলে দেবে। ব্যাংক খাতে উচ্চহারের খেলাপির কারণে ১৫টি ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা নেই বললেই চলে। অন্যরাও কতটুকু বিনিয়োগ করবে, তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখনও বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।
নতুন অর্থ বাজারে আসতে সময় লাগলেও সিদ্ধান্তটি সূচক ফেরাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি ইতিবাচক পদক্ষেপ। পাশাপাশি বাজার তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে খাতভিত্তিক গেইনারে শীর্ষে ছিল পেপার খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। চীনা করোনাভাইরাস ও দেশের বইমেলার কারণে কাগজের দাম অস্বাভাবিক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, খাতটির কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেশি হবে। সেই মুনাফার অংশ নিতে বিনিয়োগকারীরা এ খাতের শেয়ারে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকেছেন।
তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে খাতটির সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ গেইন করে। এছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাত ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছয় দশমিক ৮০ শতাংশ, সেবা খাত আট দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রকৌশল খাত চার দশমিক ৪০ শতাংশ, সিমেন্ট চার দশমিক ২০ শতাংশ, আইটি খাত তিন শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত দুই দশমিক ৭০ শতাংশ, ব্যাংক দুই দশমিক ১০ শতাংশ ও বস্ত্র খাত এক দশমিক ৫০ শতাংশ গেইন করে।
আলোচিত সময়ে জীবন বিমা খাতের শেয়ারদরে শূন্য দমমিক ২০ শতাংশ, টেলিকম খাত শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ ও পাট খাত পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশ লোকসান গুনে বিনিয়োগকারীর। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ওষুধ খাতের শেয়ারের।
একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে আলোচিত সময়ে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে ওরিয়ন ফার্মা। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৩৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়া শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান: স্কিম ওয়ান, ওরিয়ন ইনফিউশন, এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সোনালি ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, সায়হাম টেক্সটাইল মিলস, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার ও এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে শেয়ারদর পতনের শীর্ষে রয়েছে শ্যামপুর সুগার মিলস। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ দর কমেছে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুনেছে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, সমতা লেদার কমপ্লেক্স, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রংপুর ডেইরি ফুড অ্যান্ড প্রডাক্টস, ডেল্টা স্পিনার্স ও মুন্নু জুট স্টাফলার্স।
শেয়ারবার্তা / আনিস