1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
শুরুতে আশা জাগলেও বস্ত্র খাতে এখন কেবলই হতাশা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ এএম

শুরুতে আশা জাগলেও বস্ত্র খাতে এখন কেবলই হতাশা

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণে রপ্তানি বেড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙা হওয়ার যে আশা শুরুতে করা হয়েছিল, তা এখন নৈরাশ্যে ডুবেছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা এখন বলছেন, খুব শিগগিরই যদি এই রোগ নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে উল্টো আমদানি-রপ্তানিতে কমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঙ্কটাপন্ন করে তুলবে।

বছরের শুরুতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশা করছিলেন, তা অন্য দেশগুলোতে বেশি না ছড়ালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অনেক দেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার চীন থেকে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিতে যে মন্দা চলছে, তা কেটে অর্থনীতির জেগে ওঠার আশাও করছিলেন তারা।

কিন্তু সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এই ভাইরাস অন্তত ২৫টি দেশে ছড়িয়ে হাজার হাজার মানুষকে আক্রান্ত এবং হাজারের উপর মৃত্যু ঘটানোর পর পরিস্থিতি গেছে পাল্টে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনীতি-বাণিজ্য তছনছের পর তার বিরূপ প্রভাব এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে।

বাংলাদেশের বিপদ এখন বেশি দেখছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, “দিন যত যাচ্ছে, আমাদের চিন্তা-উদ্বেগ ততই বাড়ছে। এখন আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছি আমরা, আমাদের দেশ।”

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সুতাসহ অন্য যে সব কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তার ৬০ শতাংশের বেশি চীন থেকে আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বেশি পণ্যও আমদানি করে চীন থেকে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এরমধ্যে চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারই আমদানি হয়েছে চীন থেকে।

গত এক মাস চীন থেকে কোনো পণ্য বাংলাদেশে আসছে না দাবি করে পারভেজ বলেন, “অল্প কিছু পণ্য যেটা আসছে, সেটা করোনার আগে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর এলসি করা।” তিনি বলেন, চীনে নববর্ষের ছুটি শুরুর আগে যেসব কাঁচামাল বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য চীনের বন্দরে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোই মূলত এখন তারা হাতে পেতে শুরু করেছেন। তাতে আগামী মাসের পণ্য রপ্তানিতে হয়ত খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে এপ্রিল ও মে মাসের পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, ওই সময়ে রপ্তানির কাঁচামাল এখনও জাহাজে বোঝাই শুরু হয়নি। এসব পণ্য হাতে পেতে অন্তত তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস পিছিয়ে পড়েছেন উদ্যোক্তারা।

চিন্তিত সুরে তিনি আরো বলেন, করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সঙ্কটও দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমাদের রপ্তানিতে এমনিতেই ধাক্কা লেগেছে। সাত মাসে সাড়ে ৫ শতাংশের মতো নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি। শেষ অবধি কী হয় সেটাই এখন বড় বিষয়।

বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি পারভেজ বলেন, চীনে কয়েকটি প্রদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ছুটি শেষ হলেও এখনও বেশির ভাগ কারখানা সচল হয়নি। মৃত্যুভয়ে কেউ কাজে যোগ দিচ্ছে না। এখন বলা হচ্ছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা খুলবে। কিন্তু সেটা হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

তিনি বলেন, কারখানা সচল হওয়ার পর পোশাকের কাঁচামাল উৎপাদন করে জাহাজীকরণে সময় লাগবে। সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় আগামী কয়েক মাস ভুগবেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা যে সব কাঁচামাল চীন থেকে আনি, তার বিকল্প কোনো বাজার নেই। ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও ভারত থেকে কিছু আনা যায়, তবে দাম অনেক বেশি পড়বে।

এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় – এ প্রশ্নের উত্তরে পারভেজ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে যেন পণ্য খুব দ্রুত খালাস হয় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিমানে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে খরচ কমাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে হবে।

তিনি বলেন, “আর আমাদের জন্য আরেকটি যে কাজ করতে হবে সেটি হলো, আমাদের মোট যে ১০ ঘণ্টার কর্মঘণ্টা (২ ঘণ্টা ওভারটাইমসহ) সেটা ১২ ঘণ্টা (৪ ঘণ্টা ওভারটাইম) করতে হবে। যাতে এই যে তিন সপ্তাহ-এক মাস পিছিয়ে পড়েছি সেটা পুষিয়ে নেওয়া যায়।”

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, চীন থেকে ইন্টারমিডিয়েট গুডস আর ফিনিশ প্রডাক্ট যেগুলো আমদানি করা হত, তার প্রভাব বাণিজ্যে অবশ্যই পড়বে। সাপ্লাই চেইনটা ডিজরাপটেড হয়েছে; ফার্স্ট রাউন্ডে এর এফেক্ট সবার উপর পড়বে। সেটাকে কাটিয়ে উঠতে কিন্তু এক মাস, দুই মাস সময় লাগবেই। তারপর হবে, কে কত তাড়াতাড়ি সাপ্লাই চেইনটাকে রি-ইউনিয়ন করতে পারবে।

করোনাভাইরাসের কারণে কত বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা গবেষণা করে বের করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সাজাতে সরকার ও পোশাক শিল্প মালিকদের পরামর্শ দেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।

“প্রথমত, কত বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাতিল হবে তা বিজিএমইকে এস্টিমেট করে বের করতে হবে। দুই নাম্বার হল, সরকার ও বিজিএমইকে একইসাথে একটি ডেটাবেইজ করতে হবে, বের করতে হবে কোথায় অল্টারনেট সোর্সিং করা যেতে পারে। ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কায় হোক, অল্টারনেট কোথায় আছে তা জেনে প্লাটফর্ম তৈরি করে দিতে হবে।

“যারা ছোট ও মাঝারি আছে, তারা জানে না কোথায় যাবে, তারা যেন ওইখানে যেয়ে কিছু তথ্য পেতে পারে। সেজন্য সেটা সেন্ট্রাল ডেটাবেইজটা তড়িৎ গতিতে করতে হবে।”

কারোনাভাইরাসে চীনের পণ্য আমদানি সমস্যায় বাংলাদেশের বাজারে যাতে প্রভাব না পড়ে সেজন্য বিকল্প বাজারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, “আমরা পোশাক ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছি, তারা প্রতিবেদন দিলে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে। এজন্য বিকল্প বাজারের চিন্তাও করা হচ্ছে।

“তবে এখনই বলার সময় হয়নি কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। অনেক আইটেম চীন থেকে আসে। রেডিমেট গার্মেন্টসের ফ্রেব্রিকস যেটা চীন থেকে আসে, তবে সমস্যা মূলত একটি প্রদেশ। তবুও আমরা সেদিকে নজর রাখছি। কারণ সেখান থেকে পণ্য আনতে সমস্যা হলে বিকল্প তো ভাবতে হবে।”

শেয়ারবার্তা / আনিস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ