1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
আমানতের উপর ছয় শতাংশ সুদ থেকে সরে আসছে ব্যাংক
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৭ এএম

আমানতের উপর ছয় শতাংশ সুদ থেকে সরে আসছে ব্যাংক

  • আপডেট সময় : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
bankss

পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না মর্মে ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নিজেদের নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সরে এসেছে। পদ্মা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক এখনও ১০ শতাংশের বেশি সুদে ব্যক্তি আমানত সংগ্রহ করছে। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক আগের চেয়ে কম সুদে আমানত নিচ্ছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা বলছেন, ব্যক্তি আমানত সংগ্রহের ব্যাপারে সুদারোপের ক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশনা দেয়নি। তবে ছয় শতাংশ সুদেই সরকারি আমানত সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত নেওয়া যাবে না— এমন কোনও নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয়নি।’ আমরা এ ধরনের কোনও নির্দেশনা পাইনি বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমানতের ক্ষেত্রে কত সুদ নেওয়া হবে, এটা ব্যাংকগুলোর যার যার স্বাধীনতা। আমরা আমানতে সুদ কমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেছি। কিছু ব্যাংক এরইমধ্যে সুদহার কমিয়েছে। এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ঘোষণা দিয়েছিল— ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় শতাংশের বেশি সুদে কোনও ব্যাংক আমানত গ্রহণ করবে না।’

এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ কমানোর ঘোষণার পর থেকে ব্যাংকগুলোতে আগের তুলনায় আমানত আসা কমে গেছে। যে কারণে তারা এখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, আগে আমানত আসতে হবে, তারপর ঋণ বিতরণ হবে। কাজেই আগে আমানত ধরে রাখতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গ্রাহকদের জন্য ছয় শতাংশ অফার হলেও শেষ পর্যন্ত ছয় শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বলছে, ব্যক্তি আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। এটা বাজারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি ব্যাংক যাতে সরকারি আমানত বেশি পায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ছয় শতাংশ সুদে সরকারি আমানত সংগ্রহ করতে পারবে বেসরকারি ব্যাংক।’ তবে ব্যক্তি আমানতের ওপর সুদারোপের ক্ষেত্রে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

এর আগে সরকারের আমানতের সুদহার নির্দিষ্ট করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে ছয় শতাংশ। আর এই অর্থ যদি সরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখে, তাহলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে সাড়ে পাঁচ শতাংশ।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত জানুয়ারি মাসে ২৫টির মতো ব্যাংক ব্যক্তি আমানতকারীর কাছ থেকে গড়ে সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি, বিশেষায়িত দুটি, বিদেশি চারটি ও বেসরকারি ব্যাংক আছে ১৩টি। বাকি ৩৩টি ব্যাংক আমানতকারীদের গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ দিয়েছে।

এদিকে এখন পর্যন্ত ব্যক্তি আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, ব্যক্তি আমানতের সুদহার ছয় শতাংশ বেঁধে দেওয়া হলে একদিকে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়তে পারে। অন্যদিকে সব আমানতকারী শক্তিশালী ভিত্তির ব্যাংকেই টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী হবে। এতে করে দুর্বল ভিত্তির ব্যাংকগুলো নতুন আমানত পাবে না। এমনকি বিদ্যমান আমানতও চলে যেতে পারে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক ব্যাংকিং খাতের ওপর।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সব আমানতের সুদ ছয় শতাংশে নেমে এলে ব্যক্তি আমানতকারীরা নিরুৎসাহ হবেন। এখন মূল্যস্ফীতির হারই প্রায় ছয় শতাংশের কাছাকাছি। এই অবস্থায় ব্যাংকও যদি সুদ ছয় শতাংশে নামিয়ে আনে, তাহলে ব্যাংকে টাকা রেখে কোনও মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে না মানুষ। কারণ, উৎসে কর ও আবগারি শুল্কের কারণে মুনাফা আরও কমে আসবে। এতে ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দিতে হলে আমানতের সুদ কমিয়ে আনতে হবে। আমানতের সুদ কমিয়ে খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবে না। কারণ, আমানতকারীরা হয়তো ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেবেন। এতে ব্যাংকে টাকার সংকট দেখা দেবে। আর টাকা না থাকলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের ঋণই দিতে পারবে না। বিশেষ করে এসএমই খাতে ঋণ দেওয়াই হয়তো বন্ধ করে দেবে ব্যাংক।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তারা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় এবং পরিচালনা ব্যয় কমিয়েও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব। তবে ঋণে সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়ে আগামী মাসে সার্কুলার জারি করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

শেয়ারবার্তা / হামিদ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ