পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের খবরে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। এতে একদিনেই সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। আর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে সারকারের ওপর মহল উদ্যোগ নেয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তাদের মতে, স্টেকহোল্ডারদের একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছিল না। এখন তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এর আগে গত ৫ -১৪ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে বড় দরপতন ঘটে। এ সময় লেনদেন হওয়া ৮ কার্যদিবরেস মধ্যে ৭ কার্যদিবসেই বড় পতন হয়। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ৪২৩ পয়েন্ট কমে যায়। এর প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএসইসির শীর্ষ কর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফিরে বিএসইসি ঘোষণা দেয়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পুঁজিবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরপর ১৯ জানুয়ারি শেয়াবাজারে বড় উত্থান হয়। এতে একদিনেই ডিএসইতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বাড়ে। আর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের ওপরে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে আবার পতনে পতিত হয় পুঁজিবাজার।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত টানা পাঁচ কার্যদিবস পতন হলে বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে।
নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের এ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো যা পরিশোধের সময় হবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুবিধা দেয়ায় মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) লেনদেনের শুরুতেই পুঁজিবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়, যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধান দাঁড়ায় তিন লাখ ৪১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। যা আগের দিন ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে পাঁচ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
বড় অঙ্কের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতেই সূচকের বড় উত্থান ঘটে। মাত্র পাঁচ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর কিছুটা নিম্নমুখী হয়ে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সমতলে বাড়তে থাকে সূচক।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে চার হাজার ৪৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫১৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক এমন হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৯৬টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের গতি। দিনভর বাজারে লেনদেন হয়েছে ৫০৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা আগের দিন ছিল ৩৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ২৫১ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৬৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০২টির দাম বেড়েছে। কমেছে ৩০টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস