বাণিজ্য ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ইতালি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোতে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য ইইউ যে ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল, সে সম্পর্কে বুধবার আলোচনা করেন।
দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরেও বাংলাদেশ ইইউ’র বাজারে তাদের পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ইতালির সমর্থন চেয়েছে।
দুদেশের নেতারা ২০২২ সালে ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকীর গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ইতালির রাজধানীতে নিজ নিজ দূতাবাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন করার জন্য আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা ও জিউসেপ কোতে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিব বর্ষ’ (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১) উদযাপনের বিষয়েও কথা বলেন। মুজিব বর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান জিউসেপ কোতে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ইইউ’র সমর্থন চায় বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ইতালিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য ইইউ’র অব্যাহত সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেন।
উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে গত ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক আদালত বিচারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোতের আমন্ত্রণে ৪-৬ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে চার দিনের সরকারি সফর করেন শেখ হাসিনা। দুদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন ইস্যুতে ইতিবাচক আলোচনা করেন।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে ইতিবাচক প্রবণতা
দুদেশের নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিময়ের ইতিবাচক উন্নয়নের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২ বিলিয়ন ইউরোরও বেশি বাণিজ্য বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কোতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। উভয় পক্ষই পোশাক খাতসহ বাংলাদেশে ইতালির প্রতিষ্ঠানসমূহের উপস্থিতির প্রশংসা করেন।
পোশাক খাত, ওষুধশিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, চামড়া, উচ্চ প্রযুক্তি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতসহ ইটালি ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও সুসংহত করার বিষয়ে দুদেশের নেতারা তাদের আস্থা প্রকাশ করেন।
সমুদ্র অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) ক্ষেত্রটিকে ভারত মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন – আইওআরএর প্রতি ইতালির প্রচার কার্যক্রমের সাথেও পারস্পরিক আগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
শেখ হাসিনা ও জিউসেপ কোতে ইতালিতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ব্যাপক উপস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও সুসংহত করার উপায় নিয়ে। দুদেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত অভিবাসনের বৈধ পথ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
শেখ হাসিনা এবং কোতে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, রাজনৈতিক পরামর্শ, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা) সম্পর্কিত চলমান আলোচনার প্রতি উৎসাহিত করেন। উভয় পক্ষই এসব বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
শেয়ারবার্তা / আনিস