পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যাতে কারসাজি করতে না পারে, সেজন্য হার্ড লাইনে অবস্থান নিচ্ছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাদ যায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
সম্প্রতি রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে বিএসইসি। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ারদর ৪৮ শতাংশ কমে যায়, যার নেপথ্যে ছিল কোম্পানিটির শেয়ারে অতিরিক্ত বিক্রয় চাপ। এ অতিরিক্ত বিক্রয় চাপ তৈরি করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি ও এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল। তাই আইসিবি ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে উল্লিখিত কোম্পানির শেয়ারদরে অতিরিক্ত বিক্রয় চাপ তৈরির কারণ জানাতে চেয়েছে বিএসইসি।
জানা যায়, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত আইসিবি ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে। আইসিবি, আইসিবি এএমসিএল ও আইসিবি ইউনিট ফান্ডের পোর্টফোলিওতে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে আইপিডিসির শেয়ার অতিরিক্ত কমে যাওয়ার পেছনে আইসিবি ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় চাপ তৈরির জন্য দায়ী ছিল বলে বিএসইসি’র নজরে এসেছে।
একইভাবে এসিআই’র ব্যবসায় পতনের কারণ অনুসন্ধানে ডিএসইর তদন্ত কমিটি গঠন এবং তাদের গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় কোম্পানিটির শেয়ারদরে পতন হয়েছে বলে মনে করছে বিএসইসির তদন্ত কমিটি, যা ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের পতনে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া অনুমোদন ছাড়াই পুঁজিবাজার নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন মন্তব্য করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও বিএসইসির তদন্ত কমিটি মনে করছে। একই সঙ্গে কমিটি গঠন ও বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে ডিএসই বিভিন্ন আইন-কানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। যাতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ রেগুলেটর অফিসারকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। কারণ দর্শানোর জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক পতনের কারণে অনুসন্ধান ২০১৯ সালের ২১ জুলাই বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। যে কমিটি পুঁজিবাজারের পতনের সঙ্গে ডিএসইর সম্পৃক্ততা পায়।
বিএসইসির তদন্ত কমিটি জানায়, ডিএসইর চিফ রেগুলেটর অফিসার (সিআরও) নেতৃত্বে থাকা রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিভাগটি পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করেনি। তারা আইন-কানুন, কমপ্লায়েন্স সম্পর্কে সেমিনার, গণমাধ্যম এমনকি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেনি।
এসিআই লিমিটেড ইস্যুতে ডিএসই সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের খামখেয়ালিপনায় কোম্পানিটির শেয়ারদরে পতন হয়, যা মূল্যসূচকের পতনে ভূমিকা রাখে।
বিএসইসির তদন্ত কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে, এসিআইয়ের গত কয়েক বছরের সন্দেহজনক আর্থিক বিবরণী নিয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসই ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেনÑডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী।
এদিকে এই দুই প্রতিষ্ঠানের মতো আরও কিছু কোম্পানির অনিয়মের নথি বিএসইসির হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজেরাই নিজেদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে ভূমিকা রেখেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিএসইসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যেসব কোম্পানি অনিয়ম করে নিজেদের শেয়ারের বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর হ্রাস-বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শেয়ারবার্তা / আনিস