বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা টাকা প্রদানে ২০১৯ সালের ব্যবসায় লভ্যাংশ কমিয়ে এনেছে গ্রামীণফোন (জিপি) কর্তৃপক্ষ। লভ্যাংশ কমিয়ে কোম্পানিতে রেখে দেওয়া অর্থ বিটিআরসির পাওনা পরিশোধে ব্যবহার করা হবে। এর মাধ্যমে সমাধান হবে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যার। যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজারে বর্তমানে জিপির কাছে বিটিআরসির পাওনা দাবির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক হিসাবে কাজ করছে। এই পাওনা দাবির আলোকে জিপির শেয়ার দর কমেছে হাজার হাজার কোটি টাকার। তবে অবশেষে সেই পাওনা পরিশোধে ইতিবাচক জিপি কর্তৃপক্ষ।
গত ২ এপ্রিল জিপির কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে চিঠি দেয় বিটিআরসি। যা নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরী হয় এবং আদালতে গড়ায়। যা নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গ্রামীণফোনকে ৩ মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা প্রদানের আদেশ দেন। এর মাধ্যমে বিটিআরসির পাওনা প্রদান থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না গ্রামীণফোনের। এমতাবস্থায় জিপি কর্তৃপক্ষও টাকা প্রদানে নমনীয় হয়ে এসেছে। আর এই পাওনা মেটাতেই এবার লভ্যাংশ কমিয়ে এনেছে তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, জিপি পুঁজিবাজারের একটি বৃহৎ ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি। যে কারনে বিটিআরসির পাওনা দাবির সঙ্গে সঙ্গেই জিপিসহ পুরো পুঁজিবাজারে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। তবে সেটা সমাধানের আলো দেখা দিয়েছে। যা পুঁজিবাজারের জন্য সুখবর।
গ্রামীনফোনের ২০১৯ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২৫.৫৬ টাকা। এরমধ্য থেকে কোম্পানিটির পর্ষদ ১৩০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৩ টাকা (অন্তবর্তীকালীন ৯ টাকাসহ) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার পরিমাণ আগের বছর ছিল ২৮০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ২৮ টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে গ্রামীনফোনের লভ্যাংশ অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
কোম্পানিটির ২০১৯ সালে নিট মুনাফা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে থেকে ১ হাজার ৭৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা লভ্যাংশ প্রদান করা হবে। বাকি ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা রিজার্ভে রাখা হবে। লভ্যাংশ কমিয়ে এই রিজার্ভ রাখার কারন হিসাবে রয়েছে বিটিআরসির পাওনা দাবি করা।
এ বিষয়ে লিখিত জবাবে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিটিআরসির পাওনা দাবি নিয়ে বর্তমান অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসায় পরিচালনায় সুবিধার জন্য লভ্যাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। যা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চিঠিতে আরেক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে, গত ২৪ নভম্বের ৩ মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা প্রদানের রায়টি পুর্নববিচেনার জন্য গ্রামীণফোন ২৬ জানুয়ারী বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের মাননীয় অ্যাপিলেট ডিভিশনে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। আবেদনে গ্রামীণফোনের নিকট থেকে বিটিআরসির ত্রুটিপূর্ণ অডিটের ভিত্তিতে দাবিকৃত মূল টাকার প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকা ১২ টি সমান মাসিক কিস্তিতে ডিপোজিট হিসাবে জমা দেয়ার সুযোগ প্রদানের জন্য আবেদন করেছে।
বিটিআরসির পাওনা দাবির চিঠি প্রদানের আগের দিন বা গত ১ এপ্রিল গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন ছিল ৫৬ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। যা ০২ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে কমে দাড়িঁয়েছে ৩৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকায়। এ হিসাবে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ২১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল