চলতি ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হ্রাসের হিড়িক পড়েছে। এখন পর্যন্ত যতগুলো কোম্পানির ইপিএস প্রকাশ হয়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশের ইপিএস কমতে দেখা গেছে। ১২ কোম্পানির শেয়ারের ইপিএস প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ১০ প্রতিষ্ঠানেরই ইপিএসই কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদরে।
ইপিএস প্রকাশ করা কোম্পানিগুলো হচ্ছে: রানার অটোমোবাইলস, ডরিন পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা সিমেন্ট, আরএন স্পিনিং, ইউনাইডেট পাওয়ার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, এএফসি এগ্রো, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, রিং শাইন ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। এর মধ্যে কেবল রিং শাইন ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ইপিএস বেড়েছে। বাকি ১০ কোম্পানিরই ইপিএস কমেছে। ছয় মাসে অ্যাকটিভ ফাইনের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে শূন্য দশমিক ৭৭ টাকা। আগের বছর একই সময় প্রতিষ্ঠানের ইপিএস ছিল এক দশমিক ৪৯ টাকা। অর্থাৎ, ইপিএস কমেছে শূন্য দশমিক ৭২ টাকা। একইভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে এএফসি এগ্রোর ইপিএস দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৮১ টাকা। আগের বছর একই সময় যা ছিল এক দশমিক ৩৭ টাকা। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস হ্রাস পেয়েছে ৪১ শতাংশ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রানার অটোমোবাইলসের ইপিএস হ্রাস পেয়েছে ২১ শতাংশ। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসে এ কোম্পানির ইপিএস হয়েছে দুই দশমিক ২৪ টাকা। আগের বছর একই সময় যা ছিল দুই দশমিক ৮২ টাকা। কমে গেছে ডরিন পাওয়ারের শেয়ারের ইপিএসও। চলতি আর্থিক বছরে কোম্পানির ইপিএস হয়েছে তিন দশমিক ৩১ টাকা। আগের বছর যা ছিল তিন দশমিক ৪৩ পয়সা। এছাড়া খুলনা পাওয়ার, মেঘনা সিমেন্ট, ইউনাইডেট পাওয়ার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ইপিএসও আগের বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে চলতি বছরে ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।
এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ইপিএস কমে যাওয়ার কারণে সেসব শেয়ারদর হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ইপিএস ঘোষণা আসার পরপরই কমে যাচ্ছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। কমে যাচ্ছে এসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতাও। যার জেরে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কারণ, দীর্ঘদিন বাজারে মন্দা পরিস্থিতি থাকায় তারা এমনিতেই লোকসানে আছেন। তাই নতুন করে আর লোকসান বাড়াতে চাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। কেউ মনে করেন, কোম্পানির প্রান্তিক প্রতিবেদন দেখে বছর শেষে কী হবে, তা বোঝার কোনো উপায় থাকে না। সে জন্য এ প্রতিবেদন দেখে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া ঠিক নয়। পরের প্রান্তিকেই আবার কোম্পানি ঘুরে দাঁড়াতেও পারে। তাই অপেক্ষা করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, প্রতিটি কোম্পানির ব্যবসা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি পেতে থকে। তাই প্রান্তিক প্রতিবেদন দেখে সব সময় বছর শেষে কী হবে তা বোঝার উপায় থাকে না। সে জন্য এ প্রতিবেদন (প্রান্তিক) দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক কম। এমন পরিস্থিতি থেকে দর আরও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা ঠিক নয়। যে কোনো কারণেই হোক, আমাদের বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে তাদের লোকসান আরও ভারী হয়।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেক সময় নিজেরা শেয়ার কেনার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই ইপিএস কম দেখায়। তখন শেয়ারদর কমে গেলে নিজেরাই নামে-বেনামে শেয়ার কেনেন। পরে দর বাড়লে বিক্রি করে ফায়দা হাসিল করেন। আবার লভ্যাংশ কম দেওয়ার জন্যও অনেক কোম্পানি ভুল প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। তবে এর সংখ্যা কম। তারপরও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
এদিকে প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রান্তিকে দুই কোম্পানির শেয়ারের ইপিএস বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। এর মধ্যে রিং শাইনের ইপিএস হয়েছে শূন্য দশমিক ৯৬ টাকা। আগের বছর একই সময় যা ছিল শূন্য দশমিক ৭৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস বেড়েছে ৩১ শতাংশ। এছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ইপিএস বা শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে দুই দশমিক ৬১ টাকা। আগের বছর একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল এক দশমিক ১০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস বৃদ্ধির হার ১৩৭ শতাংশ।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল