ভারতের পুঁজিবাজার হঠাৎ বড় ধস নেমেছে। শনিবার কেন্দ্রীয় বাজেট ঘোষণার দিনে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (বিএসই) প্রধান সূচক সেনসেক্স প্রায় এক হাজার পয়েন্ট কমে গেছে। অন্যদিকে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক নিফটি কমেছে প্রায় ৩শ পয়েন্ট।
বাজেটকে ঘিরে ভারতের বেসরকারি খাতের যে প্রত্যাশা ছিল,তা পূরণ না হওয়ার প্রভাবেই পুঁজিবাজারে এমন বড় দর পতন হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। খবর এনডিটিভি, ইকনোমিক টাইমস ও আনন্দবাজারের।
ভারতের অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরেই ভাল যাচ্ছে না। দেশটির জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। বাড়ছে বেকারত্ব। চাহিদা কমে গেছে নানা ধরনের পণ্যের। তাতে শিল্পের উৎপাদনও কমে গেছে। এর প্রভাবে ব্যাপক চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন শিল্প খাতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটির পুঁজিবাজার যেন উড়ে চলছিল। মাত্র কিছুদিন আগে সেনসেক্স সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে নতুন রেকর্ড গড়ে। সংশ্লিষ্ট সবারই ধারণা ছিল, সরকার নড়বড়ে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য বাজেটকে কাজে লাগাবেন। আর এই আশাবাদেই গত কিছুদিন ধরে অর্থনীতির বিপরীত ধারাতেই এগুচ্ছিল পুঁজিবাজার।
দ্বিতীয়ত, মোদী সরকারের এই বাজেট ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল লগ্নিকারীদের।আজ বাজেট ঘোষণার দিনেও প্রথমদিকে বেশ আশাবাদীই ছিলেন তারা। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট বক্তৃতা যত এগুতে থাকে,ততই তাদের আশা ফিকে হয়ে আসতে থাকে। আর তার প্রভাব পড়তে থাকে বাজারে।
বাজেট পেশের আগেই একদফা সূচক নিম্নগামী হলেও প্রথমদিকে বাজেট ভাষণ শুরু করার পর পরই উঠতে শুরু করেছিল সূচক। সেনসেক্স দেড়শো পয়েন্টেরও বেশি উঠেছিল। কিন্তু খুব বেশি স্থায়ী হল না সেটা। ঘণ্টাখানেক পর থেকেই সূচকের পতন শুরু হয়।
এমনিতেও শেয়ার বাজার শনিবার বন্ধ থাকে। কিন্তু বাজেট উপলক্ষে এ দিন শেয়ার বাজার খোলা ছিল। সকাল ১১টা থেকে সংসদে দীর্ঘ বাজেট পেশ করতে শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। তার কিছুক্ষণ পর থেকেই শেয়ার বাজার হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেনসেক্স ১০৯২ পয়েন্ট কমে যায়। তবে পরে সূচক কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।
দিনশেষে দেখা যায়,এসঅ্যঅন্ডপি সেনসেক্স আগের দিনের চেয়ে ৯৮৮ পয়েন্ট বা প্রায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩৯ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে নিফটি ৫০ আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে ১১ হা্জার ৬৬২ পয়েন্টে নেমে গেছে।
কোল ইন্ডিয়া,টেক মাহিন্দ্রা,এনটিপিসি,টাটা স্টিল এবং এসবিআইয়ের শেয়ার দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।যেমন টাটা স্টিলের শেয়ার কমেছে ১.২%,এনটিপিসির শেয়ার কমেছে ১.৬%,টেক মাহিন্দ্রার শেয়ার কমেছে ১.৮%।তবে এই সমস্ত শেয়ারগুলির প্রতি ইউনিট মূল্য কত হয়েছে,তা এখনও জানা যায়নি।
বাজেট নিয়ে বেসরকারি খাতের আশাভঙ্গের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সরকারি শেয়ার অফলোড করার ঘোষণাও শনিবারের বড় দরপতনে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন দেশটির কোনো কোনো বিশ্লেষক।
উল্লেখ, ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ আগামী এপ্রিল মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া পরবর্তী অর্থবছরে বেশ কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার ঘোষণা দিয়েছেন তার বাজেট বক্তৃতায়। এর মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বড় জীবনবীমা কোম্পানি এলআইসি’ও রয়েছে।
শেয়ারবার্ত / আনিস