পুঁজিবাজারের দরপতন যেন প্রতিদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনই কমছে সূচক, দর হারাচ্ছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। সূচকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেয়ারদর কমতে থাকায় অনেক কোম্পানির শেয়ার এখন অভিহিত মূল্যের (ফেসভ্যালু) নিচে। সোমবার তালিকাভুক্ত ৩৫৭ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৫টি অভিহিত মূল্য ১০ টাকার কমে কেনাবেচা হয়েছে, যা তালিকাভুক্ত সব শেয়ার ও ফান্ডের প্রায় ২৪ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫২টি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। এ সংখ্যা তালিকাভুক্ত মোট শেয়ারের ১৬ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩১৯টি। অথচ দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের নভেম্বরে এমন দরে কেনাবেচা হওয়া শেয়ার ছিল মাত্র সাতটি, যা মোটের ২ শতাংশ। ওই বছর তালিকাভুক্ত শেয়ার ছিল ৩০১টি। এক বছর আগে ৩১৫ শেয়ারের মধ্যে ৩৫টির দর ছিল ১০ টাকার কম।
বিভিন্ন খাতের মধ্যে বর্তমানে বস্ত্র খাতে অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হওয়া শেয়ার সবচেয়ে বেশি। এ খাতের তালিকাভুক্ত ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ১৯টির বাজারদর এখন ১০ টাকার নিচে। অর্থাৎ খাতটির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হচ্ছে, যা খাতওয়ারি হিসেবে সর্বোচ্চ। এর পরের অবস্থানে আছে আর্থিক খাত। ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৫৩। এর মধ্যে ১৬টির বাজারদর ১০ টাকার কম। দু’বছর আগে যা ছিল মাত্র একটি।
কোম্পানির শেয়ারের বাইরে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো অবশ্য দীর্ঘদিন থেকে অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৭ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টি অভিহিত মূল্যের কমে কেনাবেচা হচ্ছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ৩৬ ফান্ডের মধ্যে ২৯টি এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৩৩টির মধ্যে ২৯টি এমন দরে কেনাবেচা হয়।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে ধস নামার পর সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। এর পর সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অপেশাদার আচরণের পাশাপাশি লভ্যাংশ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক সিদ্ধান্তের কারণে এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা যায়নি। এ কারণে এগুলোর বাজারদর বাড়েনি।
শেয়ারগুলোর বাজারদর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া অত্যন্ত শঙ্কার বলে মনে করেন ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, প্রতিটি শেয়ারবাজারে কিছু খারাপ শেয়ার থাকে। তাই বলে একটা বাজারের ১৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ছয়টির মধ্যে একটি অভিহিত মূল্যে কেনাবেচা হওয়া ভালো খবর নয়।
তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে না পারলে সেটি ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে না। তখন বিনিয়োগকারীরা ওই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারায়। এতে ওই শেয়ারের দর কমে যায়। এটা সবাই জানে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা কমে যাওয়ার মূল কারণ সুশাসনের অভাব, যা সব সময় সামনে আসে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে এখনও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু ভালো উদ্যোক্তার কারণে গুটিকয় কোম্পানিতে সুশাসন রয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস