তৈরি পোশাক দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হিসেবে চিহ্নিত। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে সাত দশমিক ৭৪ শতাংশ। যেখানে ভিয়েতনামের এ খাতের প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও পাকিস্তানের চার দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশীয় পোশাক খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসে করকে এক ধরনের বাধা হিসেবে মনে করেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাজেটে এ খাতের আয়ের ওপর উৎসে কর এক শতাংশ করা হয়। যদিও পরে তা কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বর্ধিত হারে উৎসে কর কর্তনের ফলে প্রায় চার মাসে (জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর) রপ্তানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬১১ কোটি টাকা। সেজন্য রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) উৎসে কর শূন্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে অর্থবছর শেষে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা। বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্প্রতি বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, পোশাক খাতের রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২০ অক্টোবর উৎসে কর হ্রাস করে আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়, পণ্যের রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। তবে কোন মাস থেকে (ভ‚তাপেক্ষ সময়) ২০ জুন পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে পোশাক রপ্তানিকারকদের ভেতর সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হকের সই করা এ-সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়, পোশাক খাতের উৎসে কর হ্রাস করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে যে আদেশ জারি করা হয়েছিল, তাতে কার্যকর করার তারিখ উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ভ‚তাপেক্ষ কার্যকর করা হয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরের ২০ অক্টোবর উৎসে কর হ্রাসের যে আদেশ জারি করা হয়েছে, তাতে ভ‚তাপেক্ষ সময় উল্লেখ করা হয়নি। ফলে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার নীতিগত সমর্থন দিয়েছিলেন। এনবিআরের কোন আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।
চিঠিতে ভূতাপেক্ষ সময় উল্লেখ না করায় রপ্তানিকারকদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা তুলে ধরে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় চার মাসে রপ্তানির বিপরীতে এক শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। এ সময় পোশাক রপ্তানি হয় প্রায় ৮১ হাজার ৫৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা (৯৬৫৫.০১ মিলিয়ন ডলার)। এ রপ্তানির বিপরীতে এক শতাংশ হারে ৮১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার উৎসে কর কর্তন করা হয়। বিশাল অঙ্কের উৎসে কর কর্তনের ফলে রপ্তানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, এ চার মাসে দশমিক ২৫ শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হলে এর পরিমাণ হতো ২০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৬১১ কোটি টাকা উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে। আর চলতি জানুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আনুমানিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হবে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১১ লাখ ৮৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে উৎসে কর হবে ২৯৬ কোটি টাকা। এতে আগের অতিরিক্ত কর্তন করা উৎসে কর থেকে সমন্বয় করা হলেও ৩১৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত থেকে যাবে। তবে চলতি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শূন্য হারে উৎসে কর কর্তন করা হলে অর্থবছর শেষে রপ্তানিকারকরা তা সমন্বয়ের মাধ্যমে সেই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
হিসাব কষে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত এক শতাংশ হারে অতিরিক্ত উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে (৮১৫-২০৪=৬১১) ৬১১ কোটি টাকা। আর চলতি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শূন্য হারে কর্তন করা হলে সমন্বয় হবে ২৯৬ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী বাকি (৬১১-২৯৬=৩১৫ কোটি) ৩১৫ কোটি টাকা পরবর্তী অর্থবছর সমন্বয় সাধন করতে পারবেন। রাজস্ব কোষাগারে জমা হওয়া উৎসে কর ফেরত প্রদান সম্ভব নয়। তবে এ খাতের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখা এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অতিরিক্ত কর্তন করা উৎসে কর সমন্বয় সাধনের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা যেতে পারে। পোশাক খাতের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে রপ্তানি সক্ষম করে তুলতে প্রস্তাবটি বিবেচনার অনুরোধ জানান রুবানা হক।
শেয়ারবার্ত / আনিস