২০১৩ সালে ৯টি নতুন ব্যাংক তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার শর্ত নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি একটি ব্যাংকও। সম্প্রতি তিনটি ব্যাংক আরও সময় চেয়ে আবেদন করেছে। কয়েকটি ব্যাংক আবেদন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ছয়টি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় তিনটি। দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মধুমতি, মিডল্যান্ড, মেঘনা ও ফারমার্স ব্যাংক। আর প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পায় এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল এবং এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেয়, তখন অন্যতম শর্ত ছিল- ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ইস্যুর মাধ্যমে উদ্যোক্তা মূলধনের সমপরিমাণ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করতে হবে। এর মানে কোনো ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকা মূলধন হলে বাজারে সমপরিমাণ শেয়ার ছাড়তে হবে। চার হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা ৯ ব্যাংকের বর্তমানে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।
প্রবাসীদের মালিকানায় পরিচালিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল জানতে চাইলে এ বিষয়ে বলেন, অনেক পুরোনো ব্যাংকের ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেস ভ্যালুর শেয়ার এখন ৮ থেকে ৯ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন ব্যাংকের শেয়ার বাজারে ছাড়লে সেগুলোও অভিহিত মূল্যের চেয়ে কমে বেচাকেনার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তারা সময় চেয়েছেন। এর পরও বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে তাদের শেয়ার বাজারে আসতে হবে।
এদিকে নানা অনিয়মের কারণে নতুন ব্যাংকের অনেক উদ্যোক্তা পরিচালক এরই মধ্যে বাদ পড়েছেন। ২০১৭ সালে ফরমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সবাইকে বাদ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে এখন ‘পদ্মা’ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের মালিকানায় পরিচালিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের কয়েকজন উদ্যোক্তা পরিচালককে বাদ দিয়ে ২০১৭ সালে পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে ঋণখেলাপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের দুই উদ্যোক্তা পরিচালককে বাদ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক বলেন, পুঁজিবাজারে আসার জন্য তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভিত্তিক অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়নি। এখন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এটি শেষ হলে পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে শিগগিরই তারা আবেদন করবেন।
বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় এমনিতেই ব্যাংক বেশি। নতুন করে আর ব্যাংকের অনুমোদন না দিয়ে শাখা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবার আওতা বাড়ানোর পক্ষে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে ২০১০ সালে নতুন ব্যাংক দেওয়ার উদ্যোগের শুরুর দিকে এর বিরোধিতা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দেন, সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছায় নতুন ব্যাংক দেওয়া হবে। এরপর সুর নরম করে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। তবে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। যেসব শর্ত পরিপালনের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব ব্যাংক কার্যক্রমে আসে। অন্য শর্তের মধ্যে ছিল- মোট ঋণের অন্তত ৫ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করা হবে। নিট মুনাফার অন্তত ১০ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয় করা হবে। তবে ব্যাংকগুলো এসব শর্ত শিথিল চেয়ে কয়েক দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, পূঁজিবাজারে আসার জন্য তিনটি ব্যাংক সময় চেয়ে আবেদন করেছে। অন্য ব্যাংকগুলোও আবেদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে আপাতত কোনো ব্যাংককে সময় না দিয়ে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডিদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে। ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শেয়ারবার্তা / আনিস