ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একীভুত ও পুর্নগঠনের বিষয়টি জোর দিয়ে ফাইনান্স কোম্পানি আইন ২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। আগেও এ বিষয়গুলো ছিল, তবে কিভাবে একীভূত বা পুর্নগঠন হবে এটি স্পষ্ট ছিল না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তারা খসড়া আইনটি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত ও পুনর্গঠন প্রসঙ্গে আইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাইলে বা নিজের ব্যবসার কিয়দাংশ অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে বা বিদ্যমান দায়-সম্পদ পূন:মূল্যায়নের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে তা করতে পারবে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কার্যকলাপ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই কোম্পানি অবসায়নের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বলেন, একীভূত ও পুর্নগঠনের বিষয়টি আগের আইনেও ছিল। কিন্তু ওই আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল না। তাই নতুন আইনে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে তা দূর করতে একীভূত ও পুর্নগঠনের বিষয়টি সময়োপযুগী। তাই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি ফাইনান্স কোম্পানি আইন, ২০২০-এর খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামতের পর আইনটি চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন করা হবে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে নিয়ে এখনই কথা বলতে চান না সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানগুলো।
নতুন আইন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিএলসি ফাইনান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, খসড়াটি আমরা কেবল হাতে পেয়েছি। তাই এটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। হয়তো আগামী সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে মতামত দিতে পারবো।
নতুন আইনে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো পরিচালক টানা তিন মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। তবে টানা তিন মেয়াদে পরিচালক পদে থাকলে তৃতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর পরে ফের ওই কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে ‘যাহা কিছু থাকুক না কেন এ আইন কার্যকরের অব্যাহতি পূর্বে কোনো ব্যক্তি একাধিকবার তিন মেয়াদে বা নয় বছরের অধিক পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে এ আইন কার্যকর হওয়ার তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচালক পদ শূন্য হবে’।
নতুন বিধানে আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ যে কোনো ফাইনান্স কোম্পানির পরিচালকের সংখ্যা ১৫ জনের বেশি হবে না।
নতুন আইনে বিনিয়োগের সীমা প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রত্যেক ফাইনান্স কোম্পানি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা সমষ্টিগতভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন বা রিজার্ভের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। তবে শর্ত হচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আবেদনের সাপেক্ষে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে।
এ ছাড়া কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি ভিন্ন কোনো কোম্পানিতে তার পরিশোধিত মূলধন বা রির্জাভের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার অর্জন বা ধারণ করবে না। তবে শর্ত হচ্ছে এই আইন কার্যকরের পাঁচ বছরের মধ্যে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে আরও তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেক কোম্পানি অন্য কোম্পানির অর্জিত শেয়ার বা ধারণকৃত শেয়ার নির্দিষ্টসীমার মধ্যে নামিয়ে আনবে।
এ ছাড়া নতুন আইনে আরও বলা আছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ বা আমানতকারীদের স্বার্থ পরিপন্থী পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত করা হবে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল