দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতিকে প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের প্রথম অধিবেশনে ‘প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
পবন চৌধুরী বলেন, “বিনিয়োগের পালে বড় ধরনের হাওয়া পেতে হলে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ দরকার। কারণ রপ্তানি খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে না পারলে খুব বেশি দূর এগোনো যাবে না।
“আর এজন্য দরকার হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানির বিনিয়োগ। এসব কোম্পানিকে দেশে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।”
উদাহরণ হিসেবে ভিয়েতনামের প্রধান রপ্তানিখাতের বাইরে শুধু পাদুকা শিল্প থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ অথচ বাংলাদেশ পাদুকা শিল্পে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রপ্তানি করতে পারে।”
আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা দূর করতে না পারলে বাংলাদেশের ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’ থেকে বের হতে না পারার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য এখন ডিজিটাল কাস্টমস সেবা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ই-পোর্ট সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে ই-সার্ভিস দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্যে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার পর যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত সে প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও বিনিয়োগে এখনও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অফিসগুলোতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন মূল প্রবন্ধেও দেশে বেসরকারি খাতের উত্থানে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার এখনও সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “২০২৭ সালে যখন আমাদের চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হবে তখনকার পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এখন থেকেই বিশেষ করে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সরকার বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য মুক্ত বাণিজ্যের (এফটিএ) জন্য কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে।
“ওই সময় মোকাবিলার জন্য আমরা বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রে পাদুকা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হাল্কা প্রকৌশল, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং কৃষিভিত্তিক পণ্য দিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল আমরা গ্রহণ করেছি।”
অনুষ্ঠানে ইউএসএআইডির পরিচালক স্মিথ স্রিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। বাংলাদেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ এখনও দিনে ১৬৩ টাকার কম আয় করে। এসব মানুষের আয় বাড়ানোর মতো কৌশল নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে।
“বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। একটি মাত্র খাতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর জন্য বাংলাদেশকে অন্যান্য খাতের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।”
শেয়ারবার্তা / মিলন