রিং সাইন টেক্সটাইলের বিদেশী পরিচালকেরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এমন গুজবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানিটি সর্ম্পক্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। অথচ আইপিও’র অর্থের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই এবং কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবেই ওই অর্থ রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৯ জানুয়ারি রিং সাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই নিজ দেশ গিয়েছেন। এমডির শাশুরী মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে তারা নিজ দেশে গিয়েছেন। আর এটাকেই একটি মহল রিং সাইনের পরিচালকেরা আইপিও ফান্ড নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন একটি মহল এই গুজব ছড়াতে পারে বলে মনে করছে রিং সাইন কর্তৃপক্ষ। তবে তারা আগামি সপ্তাহে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বাংলাদেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। তারা চায়না নববর্ষকে কেন্দ্র করে এখনো বিদেশে রয়েছেন।
রিং সাইন কর্তৃপক্ষ একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে। তবে সম্প্রতি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবে থাকা আইপিও ফান্ডগুলো ওই ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলেন। একইসঙ্গে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হূমকি দেন। কিন্তু রিং সাইনের পর্ষদ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এমন সিদ্ধান্তে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান রিং সাইনের বিদেশী পরিচালকদের সরাসরি হূমকি দিয়েছেন। এতে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছেন রিং সাইনের বিদেশী পরিচালকেরা।
গত ১০-১২ দিন ধরে রিং সাইনের আইপিও ফান্ড আত্মসাৎ নিয়ে শেয়ারবাজারে নানা ধরনের গুজব রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কোম্পানিটির বিদেশী পরিচালকেরা আইপিওতে উত্তোলিত ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। তারা আর দেশে ফিরবেন না। এমন খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রিং সাইন নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ রাখা, না রাখা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা।
রিং সাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।
ব্যাংক হিসাব অনুযায়ি, রিং সাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিওবাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।
আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং সাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।
রিং শাইন টেক্সটাইল শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আইপিওতে ডিএসইর ফি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয় করা হবে। যা ক্রয়ে সময়সীমা রয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব আশরাফ আলী বলেন, রিং সাইন একটি বৃহৎ এবং হাজার কোটি টাকার টার্নওভারের কোম্পানি। এ কোম্পানিতে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ মোট ১২ জন পরিচালক রয়েছেন। যার ৯ জনই বিদেশী পরিচালক এবং সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। তবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিদেশী পরিচালকেরা আইপিও ফান্ড নিয়ে ভেগে গেছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে। ওই মহলের অপপ্রচারের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা সঠিক তথ্য জানার জন্য কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
তিনি বলেন, একটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইপিও ফান্ড ব্যবহার নিয়ে রিং সাইনকে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। যা নিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল