পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের সব থেকে বড় কোম্পানি সমাপ্ত হিসাব বছরে গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের পরিমাণ কমেছে। সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানিটি সব মিলিয়ে ১৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ঘোষিত এ লভ্যাংশ সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে কম। লভ্যাংশের পরিমাণ কমায় মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমেছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা।
টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) গত ২ এপ্রিল গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে চিঠি দেয়। এরপর থেকেই সরকারের সঙ্গে এক ধরনের দ্বন্দ্বে জড়ায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিটিআরসি যে পাওনা দাবি করে তার মধ্যে রয়েছে- বিটিআরসির পাওনা আট হাজার ৪৯৪ কোটি এক লাখ টাকা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা চার হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
বিটিআরসির পাওনার মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদের পরিমাণ রয়েছে ছয় হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিটিআরসি এই পাওনা দাবির পর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ৪১৭ টাকা থেকে কমে কোম্পানিটির শেয়ার দাম আড়াইশ টাকার নিচে চলে আসে। এ পরিস্থিতিতে গ্রামীণফোনে বাংলাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের সংবাদে সম্প্রতি শেয়ারের দাম কিছুটা বাড়ে।
তবে মঙ্গলবার ২০১৯ সালের জন্য কোম্পানিটির চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণার পর আবার শেয়ারের দাম কিছুটা কমেছে। গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য ৪০ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগে কোম্পানিটি অন্তর্বর্তীকালীন ৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মাধ্যমে বছরটিতে ১৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিল প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে ২০১৮ সালে ২৮০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ২০৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ১৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় গ্রামীণফোন। অর্থাৎ ২০১৫ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়লেও ২০১৯ সালে এসে তা কমে গেছে।
গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ারের শুরুর দাম ছিল ২৭২ টাকা ৪০ পয়সা। এর থেকে আট টাকা কমিয়ে প্রথমে ২৬৪ টাকা ৪০ পয়সা করে ১২০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আছে। বিপরীতে ২৬৯ টাকা ৯০ পয়সা করে চার হাজার ৩৯৫টি শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব আছে। এরপর দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে ২৬৬ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। এতে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বকেয়া নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে অনেক দিন ধরেই গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব চলছে। এতে সার্বিক শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের পরিমাণও কমে গেল। এতে বাজারে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আজ গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম না কমলে সূচকের বড় উত্থান হত।
তিনি বলেন, গ্রামীণফোন শেয়ারবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসাও ভালো। এ কোম্পানির কাছ থেকে সবাই ভালো লভ্যাংশ আশা করে। কিন্তু আগের বছরের তুলনায় এবার কোম্পানিটি অর্ধেকেরও কম লভ্যাংশ দিয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন।
এদিকে ২০১৯ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৪০ পয়সা। ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। আর লভ্যাংশ পাওয়া শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি।
শেয়ারবার্তা / হামিদ