বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি খাত হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। গত অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। চলতি অর্থ বছরে জনশক্তি রপ্তানি আয় আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যেই সে ধরনের প্রবণতা দৃশ্যমান হয়েছে।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। আগামী মাসগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পাবে এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে। কারণ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হবে। দুই ঈদের আগে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি সীমিত সংখ্যক দেশের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি মুসলিম দেশ থেকে আসে বাংলাদেশের আহরিত রেমিটেন্সের বেশির ভাগ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে ইদানিংকালে নানা ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কাজেই আগামীতে এসব দেশ থেকে জনশক্তি খাতের আয় কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার হচ্ছে সৌদি আরব। কিন্তু সে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কাজেই তারা বাইরের শ্রমিকদের এখন আর সেভাবে নিয়োগ দিচ্ছে না। এমনকি আগে যারা সৌদি আরব গেছেন তাদেরও অনেকেই দেশে ফেরৎ আসছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চলতি অর্থবছর থেকে প্রবাসী আয়ের উপর ২শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটিন্সে প্রেরণে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে এমন কোনো কোনো দেশে বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। বিশেষ করে দেশগুলো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে জনশক্তি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর পর বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম গন্তব্য হচ্ছে সিঙ্গাপুর। কিন্তু সেই সিঙ্গাপুরে এখন বিদেশি শ্রমিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হচ্ছে বিদেশি জনশক্তির কারণে তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শুধু সিঙ্গাপুরই নয় অন্যান্য কিছু দেশও জনশক্তি আমদানি কমিয়ে দেবার চিন্তা-ভাবনা করছে। এই অবস্থার অনিবার্য প্রভাব থেকে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতকে বাঁচাতে হলে এখনই জরুরি ভিত্তিতে সম্ভাবনাময় নতুন নতুন জনশক্তি রপ্তানি গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষিত শ্রম শক্তি এবং পেশাজীবীদের বেশি বেশি করে বিদেশে প্রেরণ করতে হবে।
জনশক্তি এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার জন্য কোনো কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করতে হয় না। ফলে এই খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার প্রায় পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে। তৈরি পোশাক শিল্প থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার প্রায় ৪০ হতে ৪৫ শতাংশ কাঁচামাল এবং ক্যাপিটাল মেশিনারী আমদানিতে চলে যায়।
জনশক্তি রপ্তানি খাত শুধু যে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে তাই নয় এই খাতটি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কাজেই জনশক্তি খাতকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যাবে না।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল