1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
পুঁজিবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক গুচ্ছ প্রস্তাব
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম

পুঁজিবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক গুচ্ছ প্রস্তাব

  • আপডেট সময় : শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২০

দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থই শেষ কথা। পুঁজিবাজারে বহুল প্রত্যাশিত তেজীভাব ফিরে এসেছে। সূচক ঘুরে দাঁড়িয়েছে।লেনদেন অংক কিছুটা হলেও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক গুচ্ছ প্রণোদোনা ঘোষাণার তাৎক্ষণিক প্রতিফলই এই তেজীভাবের কারণ।

স্থীতিশীলতার মাধ্যমে এই তেজীভাবকে স্থিতিশীলতায় থিতু করার বিষয়টিই হল এখন সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রথমেই যে কাজটা করা উচিত- সেটা হল পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই আস্থা ফিরিয়ে আনা। এজন্য আস্থা অর্জন সহায়ক সব বিষয়গুলোকেই সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা।সেই সাথে পুঁজিবাজারের সবগুলো মৌল ইস্যুর লাগ ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার ব্যাবস্থা করা। সংশ্লিষ্ট কোন ইস্যুকেই কম গুরুত্ব বা খাটো করে দেখা ঠিক হবে না।

আস্থা ফেরানোর জন্য প্রথম কাজটি হতে হবে বাজার ব্যাবস্থাপনার দুর্বল জায়গাগুলো মেরামত করে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চত করা। গত দশ বছরের দূরবস্থার জন্য দায়ী কারণ ও ব্যাক্তিগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী দায়ী ব্যাক্তিদের কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চতি করা।

প্রস্তাবিত তদন্ত কমিটির তদন্তের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক,বিএসইসি,ডিএসই, সিএসই ও আইসিবিসহ মার্চেন্টব্যাংকগুলোকেও নিয়ে আসতে হবে। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর গত দশ বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও ভূমিকা তদন্ত করে দোষীদের সনাক্ত করতে হবে।প্রয়োজনে অন্যান্য ব্যাক্তি ও সংস্থার কার্যক্রমও তদন্ত আওতায় নিয়ে আসতে হবে ।

প্রস্তাবিত প্রতিটি তদন্ত কর্মকর্তা হতে হবে বিষয় বিশেষজ্ঞ, সৎ অভিজ্ঞ এবং মর্যাদায় উল্লিখিত তদন্ত কর্মকর্তাদের চেয়ে উচ্চ অবস্থানের।

তদন্ত কমিটি দোষীদের দোষ চিহ্নত করে প্রমানসহ সিকিউরিজ আইন, বিধি, অথবা ফৌজদারী আইনের কোন ধারায় শাস্তিযোগ্য তা সুনির্দিষ্ট করবে। ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করণ চলবে না। প্রয়োজনে তদন্ত সময় বৃদ্ধি করা যাবে। যাতে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে তদন্ত কমিটিকে। প্রয়োজনে আরো উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বিষয় বিশেষজ্ঞ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পুন:পরীক্ষা বা যাচাই করা যেতে পারে। শর্ত হল তদন্ত প্রতিবেদন হতে হবে সুনির্দিষ্ট, নিখুঁত ও নির্মোহ।

পরবর্তী কাজটি হতে হবে, অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে বাজার ব্যাবস্থাপনার প্রতিটি যায়গা চিহ্নিত করে সেখানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা।আস্থার সুশাসন ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই এ পরির্বতনগুলো খুবই জরুরী। বিশেষ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যাবস্থাপনায় (ডিএসই) এবং আইসিবিতে ব্যাপক পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

আশু করনীয় উল্লিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করা হলে পুঁজিবাজার অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। বাজারে ব্যাপকভাবে শেয়ারের চাহিদা সৃষ্টি হতে পারে।সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কৌশল ও ব্যাবস্থা এখন থেকেই হাতে রাখতে হবে।

প্রাধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুচ্ছ ব্যাবস্থা ঘোাষণার সাথে সাথে সরকারী ব্যাংকগুলোকে শেয়ার কেনার জন্য সক্রিয় করা হয়েছে। এতে সূচক পরিস্থির উন্নতি হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারী স্টেক হোল্ডরদের সক্রিয় করা না গেলে এ তেজীভাব স্থায়ী হবে না।বেসরকারী স্টেক হোল্ডারদেরও সমানভাবে সক্রিয় করতে হবে।

শেয়ার সরবরাহের দিকটা সামাল দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়ে থাকা লাভজনক সরকারী শেয়ারগুলো বাজারে ছাড়ার জন্য তৈরী অবস্থানে রাখতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী ধাপে ধাপে বাজারে সেসব শেয়ার ছাড়তে হবে।

বিনিয়োগকারীদের – বিনিয়োগ নিারাপত্তার জন্য মৌলভিত্তি নির্ভর পোর্টফোলিও’র বিপরীতে বিনিয়োগ বীমা চালুসহ অন্যান্য ব্যবস্থাগ্রহন করা যেতে পারে।

মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনার আওতায়; লাভজনক সরকারী প্রকল্প, সরকারী সুবিধার আওতায় প্রাপ্ত বেসরকারী প্রকল্প, বহুজাতিক কোম্পানিসহ যৌথ উদ্যোগের সব প্রকল্পসহ দীর্ঘমেয়াদী সব বিনিয়োগ পুঁজি শেয়ারবাজারে তালিাকাভুক্তির মাধ্যমে উত্তলোন করার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতের নীতি নির্ধারকদের মাথায় রাখতে হবে যে দেশের আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি বর্তমানে শক্তিশালী পুঁজিবাজারের জন্য মোটেই অনুকুল নয়। প্রতিকূলেই রয়েছে। প্রতিকূুলতা সত্বেও যদি পুঁজিবাজারকে আস্থাশীল করে তোলা যায় তাহলে – এ পুঁজিবাজারই অর্থ ও পুঁজিবাজারের তারল্য দূর করা ছাড়াও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করার সামর্থ অর্জন করতে পারে।

এটা কোন উর্বর মস্তিষ্কের স্বপ্ন বা কল্পনা বিলাশ নয়। বাস্তব ও বাস্তবায়ন যোগ্য ভাবনা। এ সামর্থ অর্জন করতে হলে পুঁজিবাজারকে অবশ্যই প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যে অর্থ ও পুঁজির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সিন্ডকেট ব্যাবস্থা গুড়িয়ে দিয়ে বাজারকে প্রতিযোগিতমূলক করতে হবে। এ ব্যাবস্থায় পুঁজি পাঁচার রোধসহ পাঁচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার একটি পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে সরকারকে। অর্থদানবদের হাতে পায়ে শিকল পড়াতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুষ্টু ও দূর্নীতিবাজদের হটিয়ে শূণ্য হয়ে যাওয়া পদগুলো সৎ, দক্ষ ও দূরদর্শী ব্যাক্তিদের দ্বারা পূরণ করতে হবে। দলদাস মুক্ত প্রশাসন খুবই জরুরী শর্ত হয়ে পড়েছে এখন।

সরকার ও বেসরাকী খাতের নীতি নির্ধারকদের মাথায় থাকতে হবে এবং বাস্তবতাকে মানতে হবে যে; দেশের অর্থখাত দুর্বল,ব্যাংকগুলো ফোক্লা,শেয়ার বাজার শুষ্ক, আমদানী-রপ্তানিতে ভাটার টান,সরকারের আয় ব্যায়ে ঘাটতি। সিমেন্ট-রডসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন হ্রাস।অনেক কলকারখানা বন্ধ। নতুন কর্ম সংস্থান নেই।উপরন্তু বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে জনবল ছাঁটাই অব্যাহত।এসব বিষয়গুলো একটি শক্তিশালী অর্থনীতির প্রতিবন্ধক।
উপরন্তু আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক পরিস্থতিও বৈরী। সর্বত্র অর্থনীতিতে মন্দা লেগেই আছে।পাক-ভারত এবং ইরাণ-মার্কিন যুদ্ধ উন্মাদনা সার্বিক বৈরী পরিস্থিতিতে সার্বিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই অর্থ ও পুঁজিবাজারসহ সার্বিক পরিস্থিতিশীল সামাল দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

পুঁজিবাজার কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়।এটা কম বেশী সবারই জানা।এমতাবস্থায় দেশের পুঁজিবাজাররের জন্য লাগ ও টেকসই ব্যাবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মাথায় রাখতে হবে দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থই শেষ কথা।

ফজলুল বারী
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও পুঁজিবাজার বিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ