দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বিশ্বের যেসব দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সেসব দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে। দশ বছর আগে আমাদের অর্থনীতির আকার ছিল বিশ্বে ৫৮তম। বর্তমানে আমরা ২৯তম। শিগগিরই আমরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানের মতো দেশকে পেছনে ফেলবো’।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন্স সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ২৫ বছর ও এআইএস’র ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর যেসব দেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এমন ২০টি দেশের তালিকা করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সেই তালিকার অন্যতম। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬১ শতাংশই কর্মক্ষম। বিশ্বের আর কোনো দেশ জনমিতিক লভ্যাংশের ক্ষেত্রে এমন সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দেশের সব মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের সামনে সুন্দর একটি বাংলাদেশ অপেক্ষমাণ। একটি সুন্দর পৃথিবী অপেক্ষমাণ। একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা অপেক্ষমাণ। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে আর চাকরির জন্য কষ্ট করতে হবে না। আমাদের ১০০টি ইকোনমিক জোনে কাজ শুরু হয়ে গেছে। আরও ১০০টি ইকোনমিক জোন করার পরিকল্পনা চলছে। ২০০ ইকোনমিক জোন হয়ে গেলে দেশের ৩ কোটি মানুষের চাকরির সুযোগ হবে। এগুলো সরাসরি চাকরি হয়ে যাবে। কাউকেই আর চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। তারা ভালো ভালো জব করতে পারবে এবং দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডে নির্বাচন হয়েছে। সেই দেশের দুইটা দল আছে। দুই দলই তারা তাদের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের গ্রাম পর্যায়ে ব্রড ব্র্যান্ড সংযোগ দেবে যেটা আমরা অনেক আগেই দিয়েছি। আমরাও পিছিয়ে নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথম দুইটি শিল্পবিপ্লবে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। আমরা এখন তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে ভালোভাবে সম্পৃক্ত হয়েছি। এখনো তৃতীয় শিল্পবিপ্লব চলছে। আমাদের সামনে এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমাদের অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য এডুকেশনের পাশাপাশি ভিন্ন ধরনের কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে।
সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের জনশক্তিকে এখন ন্যানো টেকনোলজি শেখাতে হবে। ন্যানো টেকনোলজি রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও ব্লকচেইন টেকনোলজি। এই ধরনের যেসব টেকনোলজি আছে সেগুলো আমাদেরকে শিখতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শেখাতে হবে। এই জাতীয় টেকনোলজিগুলো ক্লাসরুমে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শেখাতে হবে।।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগে ব্লকচেইন বিষয়ে কোর্স চালু করতে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ শিল্পবিপ্লবের প্রধান নিয়ামক হবে প্রযুক্তি। প্রযুক্তিনির্ভর এ বিপ্লবের সুযোগ নিতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে হলে উপযোগী জনবল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তরুণ সমাজকে বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদেরকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার দিকে এগোতে হবে। সাধারণ লেখাপড়া যেটা আমরা করেছি সেটা ঠিক আছে। আমরা সবাই চাই দেশের উন্নয়ন করব। কিন্তু দেশের উন্নয়ন করতে হলে তো আমাদেরকে আগে শিক্ষিত হতে হবে। এখনকার চাহিদা মেটাতে গেলে যেই ধরনের লেখাপড়া দরকার সে লেখাপড়া যদি আমরা না করতে পারি, শিক্ষিত যদি না হতে পারি, তাহলে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবো না এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা হারিয়ে যাব।
একইসঙ্গে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি তহবিলে নিজ উদ্যোগে অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন মন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আ হ ম মুস্তফা কামালকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।
শেয়ারবার্তা / হামিদ