বিশেষজ্ঞরাও একমত হতে পারছেন না, প্রকৃত অর্থে কোন পথে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে পূর্বাভাস দিচ্ছে। এক প্রান্তিকে তারা যা দিচ্ছে, পরের প্রান্তিকে আবার কমাচ্ছে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০১৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২০ সালের পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমিয়েছে। স্ট্যাটিসটিয়া ডট কম থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অনেকটা অনিশ্চয়তা নিয়েই আইএমএফ এবার পূর্বাভাস কমিয়েছে। তারা মূলত একধরনের ভারসাম্য করেছে। ব্যাপারটা হলো, এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে বিরতি পড়েছে, ব্রেক্সিটও যে নতুন চুক্তি ছাড়া হতে যাচ্ছে, তাও একভাবে নিশ্চিত। এই দুই ক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। দেশে দেশে সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে বৈ কমছে না। পাশাপাশি বিশ্ব প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি চীন ও ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।
আইএমএফ ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর এ নিয়ে চতুর্থবার পূর্বাভাস কমাল। সেবার তারা ২০১৯ সালের জন্য ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের জন্য ৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
তবে পূর্বাভাসদানকারী অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আইএমএফ কিছুটা আশাবাদী। আইএমএফ মনে করে যে বিশ্ব অর্থনীতি ২০২০ ও ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়াবে, যদিও অন্য কেউ সেটা মনে করে না। তবে এই আশাবাদে আবার সতর্ক আইএমএফ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ বলেছেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্ষেপণে অনিশ্চয়তা আছে। ব্যাপারটা নির্ভর করছে ভারাক্রান্ত ও পিছিয়ে পড়া উদীয়মান অর্থনীতির ওপর, কারণ উন্নত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির বর্তমান হারে অনেকটা স্থিতিশীল হয়ে গেছে।’
এদিকে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেটাও আবার নির্ভর করবে নানা কিছুর ওপর। তারা বলছে, ২০২০ সালে বাণিজ্যবিরোধ যদি আবার মাথাচাড়া না দেয় এবং বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পান, তাহলেই কেবল এটি সম্ভব। সম্প্রতি গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস রিপোর্টে তারা এ কথা বলেছে।
বাণিজ্যবিরোধ এবং বিনিয়োগের গতি কমে যাওয়ার কারণে গত বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে নিচে নেমে আসে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রথম ধাপের বাণিজ্য চুক্তি হলেও এখনো বিপুল পরিমাণ চীনা পণ্যে মার্কিন শুল্ক আছে। অন্যদিকে উৎপাদন খাতে দুর্বলতা থেকে যাওয়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কমে আসবে। চীনসহ অন্যান্য উন্নত দেশের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। বাণিজ্যবিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেও প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসছে। ভারতের মতো দেশে কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। অসমতাও এই কাঠামোগত দুর্বলতার ফসল বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। অসমতা কমানো গেলেও অর্থনীতি কিছুটা গতি পাবে বলে মনে করেন অনেকে।
বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, দাভোসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের পক্ষেই কথা বলেছেন। এদিকে শেষ দিন যুক্তরাজ্য মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করতে রাজি না হলে যুক্তরাষ্ট্রও যুক্তরাজ্যের গাড়িতে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
শেয়ারবার্তা / মিলন