1. [email protected] : anjuman : anjuman
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  3. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
ঋণখেলাপি ৪১৯৮ প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ এএম

ঋণখেলাপি ৪১৯৮ প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২০

ঋণখেলাপি ৮,২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪,১৯৮টি প্রতিষ্ঠান ঋণের কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি। ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থাগুলো তাদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায়ই করতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তারা কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। ফলে খেলাপিদের কাছে পড়ে আছে মোটা অঙ্কের অর্থ।

সংসদে উপস্থাপিত ঋণখেলাপিদের তালিকা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ঋণখেলাপি তালিকায় দেখা যায়, ৪,০৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই সময় (সেপ্টম্বর ১৯) পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যা মোট ঋণের মাত্র ৩০ শতাংশ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৮,২৩৮টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) রক্ষিত গত সেপ্টেম্বরভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ ছিল খেলাপি। মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮,২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই ছিল ৮১ শতাংশ ঋণ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের সিংহভাগই ওই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আটকা।

এদিকে আইনের ফাঁক গলিয়ে অনেক খেলাপিই তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন। তাদের অনেককে খেলাপি বলা যাবে না মর্মে আদালত থেকে আদেশ পেয়েছেন। অনেকে কোনোরকম অর্থ পরিশোধ ছাড়াই খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন।

আবার কেউ কেউ খেলাপি হওয়ার যোগ্য হলেও ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় তাদের খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করেনি। রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচালকদের হস্তক্ষেপের কারণেই এটি করা হয়েছে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রকাশিত ঋণখেলাপির তালিকায় বড় কারও নাম নেই। মাত্র ১১ শতাংশ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করা হলেও প্রকৃত খেলাপি প্রায় ২৩ শতাংশ।

পুরোটাই প্রকাশ করা উচিত ছিল। অর্থাৎ ঋণ অবলোপন, ঋণ পুনঃতফসিলসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় খেলাপি ঋণ কমানো হয়েছে। এছাড়া শুধু নাম প্রকাশ করলে হবে না। এর থেকে উত্তরণের পথও বলতে হবে। খেলাপি ঋণসহ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নাজুক পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ বা আশা এখন পর্যন্ত দেখছি না। এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলেই ওই দেশের আর্থিক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকিমুক্ত মাত্রার চেয়ে ৩ গুণ বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের আর্থিক খাত প্রশ্নের মুখে পড়ছে। এতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর এলসি গ্রহণ করছে বিদেশের অনেক ব্যাংক। ফলে তৃতীয় কোনো ব্যাংকের গ্যারান্টি দিতে হচ্ছে। এতে করে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জোরালো তাগিদ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রত্যেক ঋণখেলাপি কোনো না কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সরকার থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন, ঋণখেলাপি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সেসব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে শুধু অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু শাস্তির নেতিবাচক প্রভাব যেন তার প্রতিষ্ঠানে না পড়ে সে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ ঋণখেলাপির প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যারা নিরপরাধী। অনেকে বলেন, অপরাধীকে ধরার পর্যাপ্ত আইন নেই। সংশোধন-সংস্কার করতে হবে। তাদের সঙ্গে কোনো দ্বিমত নেই, তবে যে আইন আছে, আগে সেটা প্রয়োগ করা হোক। বিদ্যমান আইনই কার্যকর করা হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী পালিয়ে যাওয়া বা মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে বেরিয়ে পড়ার সুযোগ রেখে আইনের প্রয়োগ করার নজির রয়েছে। কিন্তু তখন আইন অপরাধীকে ছুঁতে পারবে না। সর্বোপরি টাকা আদায় হল সবচেয়ে বড় শাস্তি। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

সংসদে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, মোট ঋণের প্রায় সোয়া ১১ শতাংশই নিয়েছেন ব্যাংকের পরিচালকরা। তারা দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৫টি ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন। যার পরিমাণ প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা। এটি শুধু ঘোষিত ঋণের পরিমাণ। এর বাইরেও পরিচালকরা অনেক বেনামি ঋণ নিয়েছেন। যেসব এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এখন পর্যন্ত পরিচালকদের অনেক বেনামি ঋণ শনাক্ত করা হয়েছে। যেগুলো পরে পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কিছুসংখ্যক পরিচালকের কাছে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা চলে যাওয়া, এটা ভালো লক্ষণ নয়। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের বর্তমান পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা এতেই বোঝা যায়।

ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যারা বড় বড় শিল্পপতি ভারতে, তাদের ব্যাংকের পরিচালক করা হয় না। আমাদেরও সেটি ভাবার সময় এসেছে। এছাড়া পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সীমা থাকলেও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের কোনো লাগাম টানা হয়নি।

সে কারণে ঋণ ভাগাভাগির মহোৎসব চলছে। এক্ষেত্রে একজন ব্যাংক পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নেবে, তার একটা সীমা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার।
সংসদে প্রকাশিত তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক রয়েছে যারা দীর্ঘ সময় ধরে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে আছে- রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, লেক্সকো লিমিটেড, চৈতি কম্পোজিট, সোনালী জুট মিলস মাদারিপুর স্পিনিং, সালেহ কার্পেট, ঢাকা ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনারি, ঢাকা ফিসারিজ উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করলেও এগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না দীর্ঘ সময় ধরে। ফলে ঋণের টাকাও এদের কাছে আটকে রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে ঋণ জালিয়াতি করে যারা খেলাপি হয়েছেন, তাদের কাছ থেকেও কোনো অর্থ আদায় হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ের ঋণ জালিয়াতির প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তালিকায় পড়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এনন টেক্স গ্রুপ। এ দুটি গ্রুপ গত কয়েক বছরে সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার টাকা করে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে। যেগুলোর পুরো অংশই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

একইভাবে দেশের ৭টি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশ থেকে পালিয়েছে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকপক্ষ। তারাও এখন শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় চলে এসেছে। সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি করেছে। তারাও এখন শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় রয়েছে। এসব গ্রুপের কাছ থেকেও ব্যাংকগুলো কোনো ঋণ আদায় করতে পারছে না। উল্টো এখন তারা নতুন ঋণ চাচ্ছে ব্যাংকের কাছে।

ঋণখেলাপিদের মধ্যে আরও যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি তাদের মধ্যে রয়েছে- প্রাইমেক্স ফুটওয়্যার, জাকোয়ার নিটেক্স, শাহরাইজ কম্পোজিট টাওয়েল, এসকে স্টিল, হেল্প লাইন রিসোর্স, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সুয়েটার, ইউনাইটেড এপারেলন্স, ড্রিম স্টিল অ্যান্ড রি রোলিং মিলস, ইব াহিম কনস্টোর্টিয়াম, লামিসা স্পিনিং, একে শিপ বিল্ডার্স, স্পার্ক টেক, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ওয়ালমার্ট ফ্যাশন, আমাদের বাড়ি, হিমালয়া পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, জেরিন ফ্যাশন। এদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোও জোরালো কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

প্রকাশিত তালিকায় থাকা আরও যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থই পরিশোধ করেনি, তাদের মধ্যে কনফিডেন্স সুজ, ইব্রাহিম কম্পোজিট টেক্সটাইল, আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, কক্স ডেভেলপার লি., এএইচ জুট স্পিনার অ্যান্ড বেল্ডিং, এজি গ্রিন প্রোপারটি ডেভেলপমেন্ট, আরকে ফুডস, মিমকো জুট মিলস, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিল, কেরু অ্যান্ড কোং, জে অ্যান্ড জে ফেব্রিকস টেক্সটাইল, অনলাইন প্রোপার্টিজ, স্কাই অ্যাপারেলস লিমিটেড, আফসার ওয়েল অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রোডাক্টস, রামিসা ট্রেডিং, শিফান শিপিং, মোস্তফা ওয়েল প্রডাক্টস, মাবিয়া স্টিল কমপ্লেক্স, নোবেল কটন স্পিনিং মিল, এমারেল্ড অটো ব্রিকস, ফ্যাশন ক্র্যাফট নিটওয়্যার, এমারেল্ড স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ, শাহনেওয়াজ জুট মিলস, মার লিমিটেড, জয়নব ট্রেডিং, জালালাবাদ ফার্মাসিউটিক্যালস, এমএসটি ফার্মা অ্যান্ড হেলথ কেয়ার, রাহনুমা ফ্যাশন, ওমেগা হেলথ কেয়ার, রিভার সাইড লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এছাড়া আরও যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণের কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি তাদের মধ্যে আছে- জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এস রিসোর্স শিপিং, ইউরো কার হোল্ডিং, বাংলাদেশ অটো রিকশাচালক সমিতি, এসএফজি শিপিং, আদমজি জুট মিল, রূপালী বাংলা জুট মিল, লৌহজং ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, হলমার্ক স্পিনিং মিল, মিনটেক্স ফ্যাশন, পটেটো ফ্লেক্স, সিপিএম কম্পোজিট নিট, সেন্টার ফর এসেসটেড রিপ্রোডাকশন, সাসকো টেক্স লিমিটেড, টেকনো প্লাস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হান্নানা টেক্সটাইল লিমিটেড।

শেয়ারবার্তা / আনিস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ