রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সানাউল হককে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এমডি করা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভাতে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। কাজী সানাউল হককে এমডি করায় পর্ষদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপরদিকে কাজী সানাউল হককে এমডি করার বিষয়ে সাফাই গেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেম। পর্ষদ সভায় তিনি বলেছেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ডিএসইর এমডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদি কারও মনে হয় এমডি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।
পর্ষদ সভার পর একাধিক সদস্য জানান, পর্ষদ সদস্যদের একটি অংশের পাশাপাশি ডিএসইর আরও ২০-২৫ জন সদস্য আজ পর্ষদের কাছে কাজী সানাউল হককে এমডি করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু কারও কোনো কথা চেয়ারম্যান আমলে নেননি। উল্টো তিনি সানাউল হকের পক্ষ নিয়েছেন।
বৈঠকে পরিচালকদের একটি অংশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাজী সানাউল হককে এমডি করার বিষয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিচালকদের একটি অংশের অভিযোগের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান বলেন, এর আগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কে এ এম মাজেদুর রহমানকে এমডি করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন বিএসইসি নাকচ করে দিয়েছেন। এখন সানাউল হকের প্রস্তাব বিএসইসি অনুমোদ দিয়েছেন। যদি এমডি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা হয় তাহলে মামলা করেন।
বৈঠক শেষে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, ডিএসইর এমডি নিয়োগ নিয়ে যা হয়েছে তা পুঁজিবাজারের জন্য মোটেও ভালো হয়নি। ডিএসইর জন্য এটি খুবই খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এজন্য হয় তো পুরো পুঁজিবাজারকেই ভুগতে হতে পারে।
তিনি বলেন, ডিএসইর যে স্বতন্ত্র পরিচালকরা আছেন তাদের মেয়াদ বেশিদিন নেই। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই তাদের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে তারা পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দিয়ে গেলেন। তাছাড়া বাজার এখন একটি ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একজন স্বচ্ছ ব্যক্তিকে ডিএসইর এমডি করা উচিত ছিল।
পর্ষদ সভা শেষে ডিএসইর কার্যলয়ে সাংবাদিকরা ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাশেমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি পাশ কাটিয়ে যান। ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি ডিএসইর এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে ‘নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)’ কাজী সানাউল হককে এমডি হিসেবে প্রাথমিকভাবে বেছে নেয়া হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় তাকে এমডি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পর্ষদ সভায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের ছয়জন কাজী সানাউল হককে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন। তবে তিনজন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকসহ চারজন তার বিষয়ে আপত্তি জানান। আপত্তি জানানো শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এমডি নিয়োগে স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি।
তারা অভিযোগ করেন, ডিএসইর এমডি নিয়োগের বিষয়ে পর্ষদ সদস্যদের নোটিশ করতে হয়। কিন্তু এবার কোনো নোটিশ করা হয়নি। আবার এমডিকে পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানোর রীতি থাকলেও তা করা হয়নি।
আইসিবিতে থাকা অবস্থায় কাজী সানাউল হকের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে তাকে তলবও করা হয়। এ নিয়ে সাংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হয়েছে। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ডিএসইর এমডি করা উচিত হবে না।
তবে এরপরও পর্ষদ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ওইদিনই ডিএসই থেকে কাজী সানাউল হককে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য বিএসইসিতে আবেদন করা হয়। এরপর ১২ জানুয়ারি ডিএসই থেকে সানাউল হকের বিষয়ে পর্ষদ সদস্যদের আপত্তিগুলো চিঠি দিয়ে বিএসইসিকে জানানো হয়। চিঠিতে আপত্তিগুলো বিবেচনায় নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে এমডি নিয়োগের প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার কমিশন সভা করে বিএসইসি কাজী সানাউল হককে ডিএসইর এমডি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস