দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করছেন সরকার। গত প্রায় এক বছর ধরেই পুঁজিবাজারের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। প্রতিনিয়তই দরপতনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারের সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এমন অবস্থায় ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারের উন্নয়নের জন্য তাৎক্ষণিক কিছু নির্দেশনা প্রদান করে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারের অবস্থা উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি কিছু কার্যক্রম গ্রহণের কথাও জানানো হয়।
এই সভার পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াতে করণীয় নির্ধারণের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক গঠিত তদারকি কমিটি স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তদারকি কমিটি গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে।
মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তদারকি কমিটি সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রাপ্ত প্রস্তাবনাগুলো সমন্বিত করে পুঁজিবাজার উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। বিএমবিএ নেতৃবৃন্দ সভায় পুঁজিবাজার সম্পর্কে আশু করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনা ছিল তাৎক্ষণিকভাবে পুঁজিবাজারের তারল্য সঙ্কট নিরসনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল যোগান দেয়া,যাতে দীর্ঘ মেয়াদে বাজার স্থিতিশীল হয়।
বাজারে ভালো এবং মানসম্পন্ন আইপিও বাড়গানোর উপরও তারা জোর দেন। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শেয়ারের যোগান নিশ্চিতকরণ এবং শেয়ারে দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য আইপিও লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই লক ফ্রি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিএমবিএ যে সব প্রস্তাবনা দিয়েছে আলোচনা বৈঠকে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, কারো একক প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ঘটবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
তদারকি কমিটি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগি একটি পদক্ষেপ। সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে বাজারের সমস্যা সম্পর্কে একটি সার্বিক ধারনা পাওয়া সম্ভব। প্রাপ্ত ধারনার ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলে সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
উল্লেখ্য,পুঁজিবাজার যে কোনো দেশের অর্থনীতির একটি অবিচ্ছিদ্য অঙ্গ। উন্নত দেশগুলোতে শিল্পে বিনিয়োগযোগ্য দীর্ঘ মেয়াদি পুঁজির বেশির ভাগই পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। ব্যাংকগুলো শুধু চলতি মেয়াদি মূলধন সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো রীতিই প্রচলিত রয়েছে। শিল্প খাতে ব্যবহার্য পুজির জন্য ব্যাংকের উপর চাপ কমানোর জন্য আমাদের পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল এবং চাঙ্গা করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় ও বিদেশি ভালো মৌল ভিত্তি সম্বলিত কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাদের শেয়ারও পর্যায়ক্রমে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন বাজারে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত এবং তা সমাধানের ব্যবস্থা করা। তদারকি কমিটি সেই উদ্যোগই নিয়েছে। আমরা এই উদ্যোকে সাধুবাদ জানাই।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল