পুঁজিবাজারের দুঃসময়েও এগিয়ে আসছে না তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা। বাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) স্টক এক্সচেঞ্জগুলো, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর এসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা এগিয়ে এসেছে। কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠনকে এখনো এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
আইএসটিসিএল ট্রেডিং রুমে আয়োজিত পুঁজিবাজার উন্নয়ন বিষয়ক মত বিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় এসোসিয়শেন অব এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডস (এএএমসিএমএফ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ডিএসই বোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত বসবে আইসিবি। এটি দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এখন থেকে অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর একবার মত বিনিময় সভার ব্যবস্থার করা হবে। প্রতিটি সভা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাওয়া যায়। আজকের বৈঠকেও অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে। ইউনিলিভারের তালিকাভুক্তির বিষয়টি অনেকেই দাবি তুলেছেন। এটি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের কখনও কোন বৈঠকে দেখা যায় না। তাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদের এসব বৈঠকে আসা প্রয়োজন। কোম্পানিগুলো যে আর্থিক প্রতিবেদন দেয়- তা কতটুকু সত্য? এটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। অনেক কোম্পানি আয় লুকিয়ে রাখে। অনেক কোম্পানি ১ম, ২য় ও ৩য় প্রান্তিকে ভালো মুনাফা প্রদর্শন করলেও শেষ প্রান্তিকে এসে লোকসান দেখায়।
তিনি আরও বলেন, সূচক যখন ছয় হাজার পয়েন্ট, তখন থেকে আইসিবি কিনছে। এখনও কেনা অব্যাহত রয়েছে। আইসিবি’র বিনিয়োগেরও একটি একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণ মাত্র দু’ শতাংশ। এটি ২০ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা উচিৎ। স্বল্প মূলধনী ও বড় মূলধনী কোম্পানির জন্য আলাদা সূচক প্রয়োজন। বড় ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেই সূচকে প্রভাব পড়ছে।
এএএমসিএমএফ-এর সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, ২০১৮ সালে একটি গবেষণায় পূর্বাভাষ দেয়া হয়েছিল সূচক সাড়ে ৩ হাজার পয়েন্টে নেমে আসতে পারে। সমস্যাটি নতুন নয়, অনেক পুরনো। বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে বলে সবাই তৎপর হয়েছে। উন্নত বিশ্বে শেয়ারবাজারের মন্দা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। ২০১০ সাল থেকে ভারতের সূচক বেড়েছে ৩৯০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে উল্টোটা হয়েছে।
ড. হাসান ইমাম বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। ২০১০ সালে বলা হয়েছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হলে বাজারের তারল্য সংকট কাটবে। বর্তমানে সেটি ১০ হাজার কোটি টাকার কমে হবে না। যত সময় যাবে, ততই অর্থের প্রয়োজন বাড়বে। অন্যদিকে স্টেকহোল্ডারদের নিয়মিত বৈঠক করা উচিৎ। কনসালটেটিভ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেটির কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। সব স্টেকহোল্ডারদের এক সুরে কথা বলতে হবে। একেক জন একেক কথা বললে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। কেউ বলছে আইপিও বন্ধ করলে ভালো হবে। আবার কেউ বলছে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট বন্ধ করলে বাজার ভালো হবে। কিন্তু আইপিও বন্ধ করেও কিছু হলো না। আবার মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিভিন্ন বিধিমালা করে এ খাত ধংস করে দেয়া হলো। আইএফআইসি মিউচুয়াল ফান্ডের আইপিও’তে গ্রামীণফোনের চেয়ে বেশি আবেদন পরেছিল। বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কোনো আগ্রহ নেই।
বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে তারল্য সংকট চলছে। দ্রুত তারল্য সহায়তা দিতে হবে। সেটি অর্থমন্ত্রণালয়ের গঠিত সমন্বয় ও তদারকি কমিটির বৈঠকেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগে আমরা ১০ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
এএএমসিএমএফ-এর সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আসাদুল ইসলাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কিছু বাধা রয়েছে। সেগুলো দূর করতে হবে। যেমন ক্লোজ এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। আর ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত। তাই এ বৈষম্য দূর করতে হবে।
বৈঠকে ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী ও ডিবিএ’র নব নির্বাচিত সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেনসহ আইসিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল