২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই টানা পতনের মধ্যে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। এমন অবস্থায় বাজারকে স্থিতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় কিছু প্রতিক্রিয়ার প্রভাবে চারদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে পুঁজিবাজারে। বাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণে গঠিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তদারকি কমিটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। সোমবার এ কমিটি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে। সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা শেষে তারা মন্ত্রণালয়ের কাছে পুঁজিবাজার সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে। প্রয়োজনবোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সব সমস্যা সমাধানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিটি।
আলোচনার প্রথম পর্যায়ে সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদারকি কমিটি বিএমবিএর সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় বিএমবিএর প্রতিনিধি দল পুঁজিবাজারের বিষয়ে তাদের মতামত কমিটির কাছে তুলে ধরে। সংগঠনটি পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল জোগানের দাবি জানায়। গতকালের বৈঠকে বিএমবিএর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহেল রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. রিয়াদ মতিন। এ সময় তদারকি কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সমন্বয়ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর, কমিটির সদস্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক ও উপমহাব্যবস্থাপক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন এবং কমিটির সদস্য সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব ড. নাহিদ হোসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। তারা কমিটিতে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত করতে পেরেছেন। বর্তমানে ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা নেগেটিভ ইকুইটি রয়েছে—বিষয়টি তুলে ধরে সভায় জানানো হয়, যদি এটি সমন্বয় করতে হয়, তাহলে যেন কোনো করারোপ করা না হয়। তাছাড়া শুধু বিএসইসির একক উদ্যোগে পুঁজিবাজারকে ভালো করা সম্ভব নয়। এখানে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট ইস্যুও রয়েছে। যেমন করসংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহায়তা লাগবে। আবার কোম্পানির কিছু ইস্যু রয়েছে, যেগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে সমাধান করতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক করে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার বিষয় রয়েছে। ফলে রাতারাতি পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে এমন নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কমিটি বিএমবিএর সঙ্গে তাদের প্রথম বৈঠক করেছে। সামনে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারদের সঙ্গেও আলোচনা করবে। তাছাড়া সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সার্বিক ও সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলেও ভালো কিছুর বিষয়ে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবার্তা / আনিস