সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে নিট বৈদেশিক সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরের চলমান মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি অর্থবছরের চলমান মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে সরকারি খাতে গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি, বেসরকারিখাতে গৃহীত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা জুন ২০২০ শেষে এর আগে পূর্বে প্রক্ষেপিত ১২.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৩ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সার্বিক অর্থ ও ঋণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতি সুদ হারে কোনো পরিবর্তন না এনে সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ও দেশের পুঁজি বাজারসহ বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লিখিত মাত্রায় ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।
গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মনিটারি পলিসি কমিটির ৪৫তম সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির উপর বিস্তারিত আলোচনার পর চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ও অতিসম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি অব্যাহত থাকায় ২০১৯ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানুফ্যাকচারিংখাতের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেবাখাতের শেয়ার বেশি হওয়ায় এবং মূলত রেমিট্যান্সের অন্তর্মুখী প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির সূত্রে চলতি অর্থবছরে এ খাতের পারফরম্যান্স উৎসাহব্যঞ্জক থাকায় সার্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি মুদ্রানীতিতে প্রক্ষেপিত ৮.২ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যেও কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকায় গড় সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতির ফলে অর্থবছর শেষে তা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই থাকবে বলে ধারণা করা হয়।
রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস পেলেও প্রবাস আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সূত্রে রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবৃদ্ধির কারণে জুলাই-নভেম্বর (২০১৯) সময়কালে চলতি হিসাব ও সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। সরকারের নগদ প্রণোদনা নীতি বিদ্যমান থাকায় রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবৃদ্ধি নিকট ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
সরকার ইতোমধ্যে রপ্তানিকারকদের জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড থেকে গৃহীত ঋণের সুদহার একশত বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছর শেষে ধনাত্মক হওয়ার প্রত্যশা ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া, সরকারের গৃহীত অবকাঠামোগত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সূত্রে বৈদেশিক ঋণের অন্তঃপ্রবাহ ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির সূত্রে আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি অর্থবছর শেষে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে প্রায় ৪১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে ব্যাংকিংখাতে নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়।
শেয়ারবার্তা / হামিদ