দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হলেন প্রথম বাংলাদেশি ইয়াসির আজমান। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব থেকে বড় মূলধনের কোম্পানিটিতে বাংলাদেশি সিইও আসায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। এতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস আজ রোববার কোম্পানিটির দর সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরেও শেয়ারটির বিক্রেতা পাওয়া যায়নি।
এতে দেখা যায়, যারা দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ার কেনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের হতাশ হতে হয়েছে। আর শেয়ারের এমন দাম বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বাড়িয়েছে ৪৩ পয়েন্ট। এতে প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে সার্বিক পুঁজিবাজারেও মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে।
সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে বকেয়া পাওনা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া দ্বন্দ্বে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের বড় দরপতন হয়। এতে প্রতিষ্ঠনটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে সাড়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়।
তবে কোম্পানিটিতে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি সিইও হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন, এবার হয়তো সরকারের সঙ্গে গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্বের অবসান হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রধান থেকেও বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) গ্রামীণফোনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ইয়াসির আজমানকে আগামী ১ ফেব্রয়ারি থেকে সিইও পদে নিয়োগ দিয়েছে। সিইও হওয়ার আগে ইয়াসির আজমান ২০১৫ সালের জুন থেকে গ্রামীণফোনের সিএমও এবং ২০১৭ সালের মে মাস থেকে ডেপুটি সিইও ও সিএমওর দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রামীণফোনের নতুন সিইও ঘোষণা আসার পর পুঁজিজারের প্রথম লেনদেন দিবস ছিল আজ রোববার। কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম ছিল ২৪৪ টাকা ২০ পয়সা। এর থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে প্রথমে ১ হাজার শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। কিন্তু এ দামে কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি।
এরপর ৯ দফায় দাম বাড়িয়ে এক পর্যায়ে ২৬৩ টাকা ৩০ পয়সায় করে ৭ হাজার ৬২৭টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। তবে এ দামেও কোনো বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি। ফলে দফায় দফায় দাম বাড়লেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের বিক্রেতাশূন্যই থেকে গেছে। অপরদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৬৪ টাকা।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ‘গ্রামীণফোনে বাংলাদেশিকে সিইও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা অনেক বড় সংবাদ। সকলের মধ্যে এখন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকারের সঙ্গে হয়তো গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্বের অবসান হবে। এ কারণেই গ্রামীণফোনের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, বকেয়া পাওয়া নিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের বিরোধ দেখা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের বড় দরপতন হয়। যার প্রভাব পড়ে সার্বিক শেয়ারবাজারে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে বড় ধরনের যে ধস হয়েছে, এর পেছনেও সরকারের সঙ্গে গ্রামীণফোনের দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকেও শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
বিটিআরসি গত বছরের ২ এপ্রিল গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে চিঠি দেয়। এর মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা ৪ হাজার ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
বিটিআরসির পাওনার মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদের পরিমাণ রয়েছে ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এইসব পাওনা প্রদানে গ্রামীণফোনকে প্রথমবারের চিঠিতে ১০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয় বিটিআরসি। রিপ্লেসমেন্ট সিমের জন্য ট্যাক্স, ২জি লাইসেন্স নবায়ন ফি ও ইন্টারেস্ট বাবদ এই টাকা দাবি করে বিটিআরসি। যা মূল্যায়ন করেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল।
বিটিআরসি থেকে পাওনা টাকা দাবি করে যেদিন গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়া হয় তার আগের কার্যদিবসে অর্থাৎ ১ এপ্রিল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪১৭ টাকা। বিটিআরসি থেকে পাওয়া দাবি করার দিন থেকেই গ্রামীণফোনের শেয়ার দাম কমতে থাকে। অব্যাহত দরপতনের কারণে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়ায় ২৪২ টাকা ২০ পয়সায়।
এ হিসাবে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে ১৭৪ টাকা। গ্রামীণফোনের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩৫ কোটি ৩ লাখ ২২টি। অর্থাৎ অব্যাহত দরপতনে গ্রামীণফোনের শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে কমে ২৩ হাজার ৬০৩ কোটি ২৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৫ টাকা।
শেয়ারবার্তা / আনিস