পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্যে এর আগে ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কেবল বেসরকারি সিটি ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে তারল্য সহায়তা নেয়। অন্য কোন ব্যাংক ধার করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে নতুন করে নীতি সহায়তার বিষয়ে ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে নিজস্ব পোর্টফোলিও বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। একটি নীতিমালার অধীনে টাকা নেওয়ার জন্য আবেদন করার সময় শেষ হয় গত ২২ ডিসেম্বর। যদিও এর পরও কোনো ব্যাংক আবেদন করলে তা বিবেচনা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু সিটি ব্যাংকের বাইরে কোনো ব্যাংক এখন পর্যন্ত আবেদন করেনি।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ধার নেয় সিটি ব্যাংক। ৬ শতাংশ সুদে ২৮ দিন মেয়াদে ধারের পর কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। এভাবে সময় বাড়াতে বাড়াতে ছয় মাস পর্যন্ত সময় পায় ব্যাংকটি। এর পর সুদসহ টাকা ফেরত দিতে হবে। জানা গেছে, ধারের টাকা বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারেনি সিটি ব্যাংক, যে কারণে নতুন করে আর ঋণের জন্য আবেদন করেনি ব্যাংকটি। আবার অন্য কোনো ব্যাংকও টাকার জন্য আসেনি। ব্যাংকগুলোর অনীহা দেখে কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কয়েকটি ব্যাংক তখন জানায়, হিসাববর্ষ তথা ডিসেম্বর শেষ হলে এ নিয়ে তারা ভাববেন। তা না হলে বছরের শেষ সময়ের লোকসানের প্রতিফলন পড়বে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন জানায়, সময় শেষ হলেও কেউ আবেদন করলে তা বিবেচনা করা হবে। যদিও কোনো ব্যাংক আর টাকার জন্য আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সম্পর্কিত নীতিমালায় বলা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নির্ধারিত সীমার নিচে থাকা যে কোনো ব্যাংক ট্রেজারি বিল বা বন্ডের বিপরীতে রেপো মূল্যের ৫ শতাংশ মার্জিন রেখে তারল্য সহায়তা নিতে পারবে। বন্ড বা বিলের বিপরীতে রেপোর মাধ্যমে ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যাংককে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এমনিতেই পুঁজিবাজারের খারাপ অবস্থার কারণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় রয়েছে। এর মধ্যে আবার ঋণের সুদহার কমাতে বলা হচ্ছে। দরপতনের কারণে অনেক ব্যাংক পুঁজিবাজারে লোকসানের মধ্যে রয়েছে। এখন আবার ৬ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে বিনিয়োগ করলে দু’দিক দিয়েই তাদের লোকসান গুনতে হবে। একদিকে সুদ দিতে হবে, অন্যদিকে দাম কমলে সে লোকসান বহন করতে হবে। যে কারণে হয়তো ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করতে অনেক ধরনের নিয়ম পরিপালন করতে হয়। সব মিলিয়ে আগ্রহ কম রয়েছে। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিনা সুদ কিংবা লাভ-লোকসান ভাগাভাগির শর্তে সরকার যদি কোনো তহবিল দেয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্টরা জানান, পুঁজিবাজারে অধিকাংশ ব্যাংকেরই নতুন বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়টি মূলধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি ব্যাংক তার মূলধনের এককভাবে (সলো বেসিস) ২৫ শতাংশ এবং সহযোগী কোম্পানিসহ ৫০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ (কনসুলেটেড বেসিস) করতে পারে। অনেক ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এ সীমার নিচে। তবে বাজারের খারাপ অবস্থার কারণে কেউ টাকার জন্য আসেনি।
শেয়ারবার্তা / আনিস