1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
যেভাবে পুঁজিবাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নিল পিকে হালদার
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ এএম

যেভাবে পুঁজিবাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নিল পিকে হালদার

  • আপডেট সময় : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২০
pk-haldar-dudok

দেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারি করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার এখন ট্য অব দ্য কান্ট্রি। তার অর্থ পাঁচারের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও। কারণ তার অর্থ সংগ্রহের অন্যতম বিশেষ স্থান ছিল পুঁজিবাজার। শেয়ার কিনে রাতারাতি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো গেম করে পিকে হালদার পুঁজিবাজার থেকে অর্থ বের নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া তিন প্রতিষ্ঠান হলো সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, রহমান কেমিক্যালস ও নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এর বাইরে আজিজ ফাইবার্স জুট মিলের নিয়ন্ত্রণও এখন তাঁর হাতে, যেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আজিজ পাইপসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে পি কে হালদার যে বিনিয়োগ করেছেন তার উৎস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পি কে হালদার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারি করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া সিমটেক্স, রহমান কেমিক্যালস ও নর্দান জুটের নামের ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে ১৭০ কোটি ঋণ নেওয়া হয়। এই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সেই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি, যা পি কে হালদার দখল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ওই ১৭০ কোটি টাকা ঋণের সুবিধাভোগী পি কে হালদারই।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ছাড়া পি কে হালদারের দখল করা বাকি তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।

পি কে হালদার পুঁজিবাজারে লেনদেন করতেন নিজের ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমেই। কেএইচবি সিকিউরিটিজ ও হাল ক্যাপিটাল লিমিটেডের মালিকানা তাঁর। এর বাইরে আরও অন্তত ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করতেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ ও আইএল ক্যাপিটাল রয়েছে। এ দুটি আবার পি কে হালদারের দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সহযোগী।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে থেকে নর্দান জুটের শেয়ার কেনেন পি কে হালদার। সেখানে চেয়ারম্যান করা হয় পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে। আর পরিচালক করা হয় পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারীকে। কোম্পানিটির পর্ষদে পরিচালক মাত্র এ দুজনই।


পি কে হালদারের মতো অমিতাভ অধিকারীও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র। পাশাপাশি অমিতাভ অধিকারী বিসিএস ক্যাডারের (প্রশাসন) কর্মকর্তা ছিলেন। চাকরি ছেড়ে তিনি পি কে হালদারের আনন কেমিক্যাল, নর্দান জুট ও রহমান কেমিক্যালের অংশীদার ও পরিচালক হন।
নর্দান জুটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এর কার্যালয় কারওয়ান বাজারের ডিএইচ টাওয়ারে নিয়ে আসা হয়, যা আগে মতিঝিলে ছিল।

অবশ্য নর্দান জুটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনঙ্গ মোহন রায় জানিয়েছেন, পি কে হালদারের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে যোগাযোগ নেই। তিনি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। তার কোনো শেয়ার নেই।’ অনঙ্গ মোহন রায় নর্দান জুটের পাশাপাশি আজিজ ফাইবার্স জুট মিলও দেখাশোনা করেন।

রহমান কেমিক্যালের শেয়ার কেনা হয় পি কে হালদার, অমিতাভ অধিকারী, কেএইচবি সিকিউরিটিজের এমডি রাজীব সোম, আনন্দ মোহন রায়, রতন কুমার বিশ্বাস, পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল, রেপ টাইলস ফার্ম, আর্থস্কোপ লিমিটেড, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের নামে। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে রহমান কেমিক্যালের নামে ৫৩ কোটি টাকা, রেপটাইল ফার্মের নামে ৬০ কোটি টাকা, আর্থস্কোপ লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭৪ কোটি টাকা ঋণ বের করা হয়। রহমান কেমিক্যালের পরিচালকও পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান, তাঁর স্ত্রী মাহফুজা রহমান, পুত্র নিয়াজ রহমান ও ইসতিয়াক রহমানের নামে ২৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন পি কে হালদার। আবার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে সিমটেক্সকে দেওয়া হয় ৮০ কোটি টাকার ঋণ। সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে সিদ্দিকুর রহমানের একক শেয়ার ২৫ শতাংশের বেশি।


ফরিদপুরের আজিজ ফাইবার্স জুট মিলটি একসময় শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত আজিজ পাইপসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে আজিজ ফাইবার্স জুট মিলটি কিনে নেন পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল ও রামপ্রসাদ রায়, যার প্রকৃত ক্রেতা পি কে হালদার। পুরো প্রতিষ্ঠানটি এখন পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণে। এর পরিচালকও অমিতাভ অধিকারী।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল ৫৭ কোটি টাকা ঋণ পায়, যার সুবিধাভোগী পি কে হালদার নিজেই। রেপটাইল ফার্ম, কেএইচবি সিকিউরিটিজের পাশাপাশি আজিজ ফাইবার্সেরও এমডি রাজীব সোম। নামে-বেনামে পি কে হালদার আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। তার মধ্যে একটি ক্লিউইস্টন ফুড অ্যান্ড অ্যাকোমোডেশন। দুদকের এজাহারে বলা হয়েছে, ক্লিউইস্টন ফুডে অমিতাভ অধিকারী, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর জেড এ অ্যাপারেলস লিমিটেড, আবদুল আলিম চৌধুরী, মো. সিদ্দিকুর রহমান, রতন কুমার বিশ্বাস, পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল, সিমটেক্স টেক্সটাইল, মো. আলমগীর হোসেন, পি অ্যান্ড এল অ্যাগ্রো ফার্ম, আনন কেমিক্যাল ও উইনমার্ক লিমিটেডের নামে মোট ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন পি কে হালদার।

শেয়ারবার্তা/ সাইফুল

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ