দেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের জন্য বিগত অর্থবছরটি দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। ওই বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে সাড়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছিল ২০ শতাংশের বেশি। সেই দুঃস্বপ্ন যেন কাটতে শুরু করেছে। কারণ, রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে পাটের স্বল্পতা থাকায় অর্থবছরের শেষ দিকে আবার রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট ৫১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ৪০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ শতাংশ এবং আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছর মোট ৮১ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা তার আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এমন তথ্যই জানিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কাঁচা পাটের রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। পরের অবস্থানে আছে পাটের সুতা ও বস্তা। এর মধ্যে পাটসুতায় রপ্তানি আয় সবচেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ৩১ কোটি ডলারের পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। আর বিভিন্ন ধরনের পাটের ব্যাগ রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি গতকাল বলেন, বন্যার কারণে গত মৌসুমে পাটের ফলন ভালো হয়নি। উন্নত মানের পাটের উৎপাদন কম হয়েছে। সে জন্য কাঁচা পাটের দাম বাড়তি। তাই পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি দাম মিলেছে। পরিমাণ না বাড়লেও দামের জন্যই রপ্তানি আয় বেড়েছে। তিনি বলেন, গত বছর রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি সাড়ে ২১ শতাংশ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পাটের রপ্তানি তিন বছর আগের জায়গাতেই আছে।
বর্তমানে বাংলাদেশি পাটসুতার বড় ক্রেতা তুরস্ক। দেশটির উদ্যোক্তারা সেই পাটসুতা দিয়ে কার্পেট তৈরি করে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক ১৩ কোটি ডলারের পাটসুতা নিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পাটসুতা ও ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের কাঁচা পাট নিয়েছে চীন। একই সময়ে ভারত ২ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পাটসুতা ও ৩ কোটি ৮১ লাখ ডলারের কাঁচা পাট বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে। এ ছাড়া পাকিস্তান আমদানি করেছে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের কাঁচা পাট।
দেশের একাধিক পাটকলের মালিকেরা জানান, ফলন কম হওয়ায় বর্তমানে ভালো মানের পাটের মণ আড়াই হাজার টাকায় উঠেছে। কিছুটা নিম্নমানের পাটের মণ ২ হাজার ২০০ টাকা। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী পাট মিলছে না। আড়তদারেরা বাড়তি দামের আশায় পাট মজুত করে রাখছেন।
সামনের মাসগুলোতে কাঁচা পাটের দাম আরও বাড়বে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পেলে রপ্তানি কমে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি। তিনি আরও বলেন, ‘তুলনামূলক নিম্নমানের কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করা দরকার। বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা কমলেও বহুমুখী পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। ভারত বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। আমাদেরও সেদিকে নজর দেওয়া দরকার।’
বিশ্বের ৩৯টি দেশে বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানি করে ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, বহুমুখী পাটপণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। তবে কাঁচামালের সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভাবনা হাতছাড়া হচ্ছে। ভারতের বহুমুখী পাটপণ্যের দাম বাংলাদেশের চেয়ে ২০-২৫ শতাংশ কম। ফলে তাদের কাছে প্রচুর ক্রয়াদেশ। বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা নিয়ে পণ্য তৈরি করে তারা রপ্তানি করছে। চীনের ব্যবসায়ীরাও একই কাজ করছেন। বহুমুখী পাটপণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত মানের কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী। সূত্র: প্রথম আলো
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল