সরকার জীবন বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। ‘পুরোনো আইনে প্রণীত বিধিমালা সময়োপযোগী নয়’ খাতসংশ্লিষ্টদের এমন মন্তব্য ঠেকাতে নতুন ওই প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। যাচাই-বাছাই ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা’ চূড়ান্ত করেছে।
সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো এককালীন আদায় করা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের পাঁচ শতাংশ ও কিস্তিতে আদায়ের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কমিশন, পারিশ্রমিকসহ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। আর নবায়ন বিমা প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করা যাবে। আর একক প্রিমিয়াম বিমার ক্ষেত্রে আদায় করা প্রিমিয়ামের পাঁচ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করা যাবে। আর গ্রুপ বা গোষ্ঠীবিমার ক্ষেত্রে প্রতি বছর পরিশোধিত প্রিমিয়ামের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো।
জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর বয়স ও প্রিমিয়ামের অঙ্ক বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর প্রথম পাঁচ বছরে কোম্পানিগুলো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৫ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করতে পারবে। ছয় থেকে ১০ বছর বয়সী জীবন বিমা কোম্পানি প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৪ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ২২ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। ১০ বছরের বেশি সময় দেশে ব্যবসা করছেÑএমন জীবন বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে মোট প্রিমিয়াম আয়কে আমলে নিয়ে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করছে-এমন জীবন বিমা কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় ১০০ কোটি টাকা বা তার কম হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯৩ শতাংশ, মোট প্রিমিয়াম আয় ১০০ কোটি টাকার বেশি, কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার নিচে হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯২ শতাংশ, মোট প্রিমিয়াম আয় ৫০০ কোটি টাকার বেশি হলে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৯২ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে। আর নবায়ন প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ, ২০২০ সালে ১৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ১৮ শতাংশ, ২০২২ সালে ১৬ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ ব্যয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১০ সালে বিমা আইন প্রণীত হলেও এতদিন জীবন বিমা কোম্পানিগুলোকে পুরোনো অধ্যাদেশের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা ব্যয় করতে বলা হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে ব্যয় বাড়ার কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইনি নির্দেশিত সীমার মধ্যে রাখতে পারছে না। যে কারণে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাই জটিলতা এড়াতে সময়োপযোগী বিধিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেওয়া হচ্ছিল। এর জের ধরেই বিমা আইন মেনে নতুন করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বিধিমালা প্রণয়ন করা হলো। এবার জীবন বিমা এজেন্টের কমিশন, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও ব্যবস্থাপনা সব ব্যয়কে একসঙ্গে ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস